দুর্নীতিমুক্ত সিটি মেয়র চান বিশিষ্টজনরা

আমার মেয়র শীর্ষক বৈঠকে আলোচকরানির্বাচনে অনেক প্রতিজ্ঞা করলেও সেটি আর বাস্তবায়ন হয় না বলে অভিযোগ করেছেন দেশের বিশিষ্ট আইনবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও রাজনীতিবিশ্লেষকরা। তাদের মতে,  নাগরিকরা একজন উদ্যোগী মেয়র চায়, যিনি কোথায় কী কাজ করছেন, তা জনগণকে জানতে পারবেন। যিনি দুর্নীতিমুক্ত, অপচয়হীন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেন। জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে অপরাজেয় বাংলা আয়োজিত ‘আমার মেয়র’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বৈঠকে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিএনপি অসম প্রার্থী দিয়েছে। একজন প্রার্থীর বাবার পরিচয় ছাড়া আর কোনও পরিচয় নেই। অন্যদিকে  ব্যারিস্টার তাপস সফল আইনজীবী, ৩ বারের সংসদ সদস্য। পরীক্ষিত। আর আতিকুল ইসলাম সফল ব্যবসায়ী। তিনি ৯ মাস কাজ করছেন, তার অনেক সফলতা আছে। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন।’

দৈনিক আমাদের অর্থনীতির প্রকাশক নাইমুল  ইসলাম খান বলেন, ‘কেমন মেয়র চাই, এ নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। আমার মনে হয়, শূন্য থেকে যিনি নিজেকে তৈরি করতে পেরেছেন, এমন মানুষ হলে ভালো হয়। মেয়রের উদ্যোগ জনগণের কাছে দৃশ্যমান হওয়া উচিত। মেয়র কোথায় কী কাজ করছেন, তা জনগণকে জানতে পারেন। অনেক রাস্তা, ফুটপাত মেরামত করা হয় না, ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয়। আমরা  প্রায় দেখি অপচয়।  একজন উদ্যোগী মানুষ চাই, যিনি দুর্নীতিমুক্ত, অপচয়হীন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেন।’

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘অতীতে দেখেছি অনেকে অনেক প্রতিজ্ঞা করেছেন। কিন্তু সেটা আর বাস্তবায়ন করেননি। নাগরিকরা কর দিচ্ছে, কিন্তু রাস্তায় তো আমরা আর্বজনাও দেখছি। বছরের পর বছর মেয়র আসেন-যান কিন্তু  প্রতিকার নেই। মশা নিয়ে হাস্যকর কথাবার্তা প্রত্যাশা করি না। নির্বাচনের সময়ে কোন প্রার্থী কোথায় থাকবেন, তা জানানো হয়, কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলে আর অ্যাপেয়েনমেন্ট পাওয়া যায় না।’

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘যিনি মেয়র হবেন, তার আসলে নিজে থেকে কিছু করার নেই। মেয়র হলে সরকারের আলোয় আলোকিত হবেন। বিরোধী দলের হলে সেই আলো তিনি পাবেন না। সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক সরকার সর্মথিত ছিলেন। কিন্তু তাদের পার্থক্য ছিল। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মেয়রই এসেছিলেন, কিন্তু কেউ তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সরাতে পারেননি।’

মাসুদ কামাল বলেন, ‘তাপস ব্যস্ত আইনজীবী, তিনি বিজয়ী হলে কি তাকে পাওয়া যাবে? আতিকুল ইসলাম বলছেন, তাবিথের পোস্টার তার পোস্টারের চেয়ে বেশি। কিন্তু আমি তো তা দেখছি না। যারা এমনি এমনি মিথ্যা কথা বলেন, তারা বিপজ্জনক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলেন যারা, তারা কি বঙ্গবন্ধুর আর্দশ মানেন? ইশরাকের বাবা মেয়র ছিলেন, কিন্তু তিনিও তেমন কোনও মহৎ কাজ করেননি।’ 

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, ‘চার মেয়র প্রার্থীর শেকড়ের খবর নেওয়া যেতে পারে। একজন প্রার্থীর বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে যা করার, করে গেছেন। আরেক প্রার্থীর গোপন সম্পদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, দুজন প্রার্থীর ভূমিকা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন।’

তরুণ রাজনীতিবিদ এ কে ফায়াজুল হক রাজু বলেন, ‘ঢাকাকে নিয়ে সমস্যার শেষ নেই। আনিসুল হক কাজের একটি মানদণ্ড তৈরি করে গেছেন। ঢাকা আমাদের হৃদস্পন্দন। ঢাকাকে ভালো রাখতে হলে ভালো ডাক্তার প্রয়োজন। ২০২০ সালেও যদি মশার কারণে মানুষ মারা যায়, এর চেয়ে দুঃখের কিছু হয় না।’ এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।