১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর থেকে একের পর এক রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত, সরকার গঠন, শাসনতন্ত্র তৈরির প্রস্তুতি এবং সামাজিক-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যস্ত সময় কাটান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে একইসঙ্গে দল গোছানোর কাজে হাত দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশ গঠনে কঠোর পরিশ্রম করতে দলীয় কর্মীদের প্রতি বারবারই আহ্বান জানাতে থাকেন। পত্রিকার পাতায় তাঁর দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডকে যেভাবে তুল ধরা হয়েছে, সেটাকেই এই প্রতিবেদনে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
কেবল তার কাজকর্ম নিয়ে দিনের নানা সময়ের ছবি দিয়েও প্রথম পাতার ব্যানার করা হয়েছে বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষার সংবাদপত্রেই। প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে সবাই যেন বঙ্গবন্ধু এবং তার নেওয়া নানা পদক্ষেপই দেখতে চেয়েছেন।
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। বিমানবন্দরে নেমে প্রথমে তিনি রেসকোর্সে গিয়ে দেশের জনগণের সামনে হাজির হন।
১২ জানুয়ারি বঙ্গভবনে বিপুল করতালি, জয় বাংলা ও বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ ধ্বনির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শপথ নেওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ১১ সদস্যের মন্ত্রিসভার নামও দেন। পরেরদিন বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে চৈত্র মাস (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেন, যা দেশে-বিদেশে বেশ সুনাম কুড়ায়।
দেশে ফেরার দিন থেকেই দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেতে চেষ্টা করেন। তিনি শুরুতেই বলে দেন, ১৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন তিনি। সরকার দেশে নতুন অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে জানিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে নিজের নীতি ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মাসজুড়েই ছিল অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ। এই নির্দেশ না মানলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই বিষয়েও হুঁশিয়ারি ছিল। এরইমধ্যে মাসের শেষে ঈদের ছুটি পড়ায় প্রথমে ২৮ জানুয়ারি দিন নির্ধারিত থাকলেও পরবর্তী সময়ে সেটি ৩১ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।
ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে দেশের ছাত্র ও যুবসমাজকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করতে বেশকিছু সভা করেন বঙ্গবন্ধু। ছাত্রনেতারা বিভিন্ন ইস্যুতে একত্রে বিবৃতি দিয়ে তাদের অবস্থানের জানানও দেন মাসজুড়েই।
শুরুতেই সুযোগ পেয়ে বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্টে যান, যেখানে তাদের সাত দিন অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। সেখানে গিয়ে তিনি যুদ্ধবন্দিদের খোঁজ নেন এবং তারা কেমন আছেন, সে বিষয়ে পৃথক পৃথকভাবে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
২৬ জানুয়ারি পত্রিকার ঘোষণায় বলা হয়, ‘আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলার সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার (২৭ ও ২৮ জানুয়ারি) পত্রিকা বের হবে না।’ এমনকি এই সময়টাতে কাগজের স্বল্পতার জন্য পত্রিকার পৃষ্ঠা কমিয়ে ছাপা হয়।