১৯৭২ সালের এই দিনে ঈদুল আজহা পালিত হয়। এই ঈদ ছিল অন্যরকম। একদিকে নতুন দেশে প্রথম ঈদের আনন্দ। আরেকদিকে স্বজন হারানোর বেদনা তখন পর্যন্ত একইরকম। এরইমধ্যে উৎসব আমেজে দিনটি পার করেন সবাই। রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ঈদের নামাজ আদায় করেন আউটার স্টেডিয়ামে। সেখানে মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগিশ ইমামতি করেন। এই প্রথম বাংলা ভাষায় ত্যাগের প্রকৃত আদর্শ কোরবানির তাৎপর্য আলোচনা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ঈদের জামাতে যোগ দেন ধানমন্ডি ময়দানে। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী তাকে অভিবাদন জানাতে তার বাসভবনে যান।
এছাড়া, ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের পর জুলফিকার আলী ভুট্টোর রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার বিষয়ে তার মতামত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নে মুজিব বলেন, ‘প্রথমে তাদেরকে বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে। স্বীকৃতি দেওয়ার পর দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক হতে পারে।’
ভারতে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক
ঈদের কারণে ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি খুব বেশি কার্যক্রম দেখা যায় না। এই দুই দিন পত্রিকাও প্রকাশিত হয়নি। তবে এই সময়টাতে ভারতে গিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মন্ত্রীদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অর্থনৈতিক সাহায্যসহ বাংলাদেশকে যেসব সাহায্য দেবে ভারত তা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, অর্থমন্ত্রী যশবন্ত রাও। বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।
একের পর এক বধ্যভূমি বের হচ্ছে জানুয়ারি মাসজুড়ে। বিজয়ের পর থেকেই শুরু হয় একদিকে যার যার গ্রামে ফেরা, আর স্বজনদের মৃতদেহের খোঁজ। এরইমধ্যে খুলনায় রেলস্টেশন ও শেখ পাড়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার শিকার শহীদদের বধ্যভূমি উদ্ধার হয় এই ঈদের মধ্যেই। স্টেশনের পেছনে পরিত্যক্ত জায়গায় কঙ্কালের স্তূপ—হানাদার বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এসব বধ্যভূমি।