এছাড়া বেশকিছু ছোটবড় সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দৈনিক বাংলা এইদিনে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিল। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি কৃষকের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন। ঘোষণা দেন কী কারণে ৬৫ ভাগ কৃষককে খাজনা দিতে হবে না। এদিন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বেশকিছু সাক্ষাতেরও খবর পাওয়া যায়।
রেসকোর্স নয়,স্টেডিয়াম
৩১ জানুয়ারি সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে মুজিব বাহিনীর অস্ত্র জমা দেওয়ার স্থান রমনার রেসকোর্সে নয়, স্টেডিয়ামে ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূর্বে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানকেই এই আনুষ্ঠানিকতার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। সংবাদপত্রগুলো সেটি প্রকাশও করেছিল। ৩০ জানুয়ারি গেরিলা বাহিনী ও ৩১ জানুয়ারি মুজিব বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র জমা নেওয়া হবে। ৩০ জানুয়ারি সকাল ৯টায় মাতুয়াইলে হেদায়েতুল ইসলামের বাসায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র জমা নেবেন ড. কামাল হোসেন। তিনি শ্যামপুর-যাত্রাবাড়ী-মাতুয়াইল এলাকার অস্ত্র জমা নেন এবং একই দিন বিকাল চারটায় বাসাবোতে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গণবাহিনীর অস্ত্র জমা নেন বঙ্গবন্ধু। বিভিন্ন জেলার মুজিব বাহিনীর সদস্যদের জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। মুজিব বাহিনীর সদস্যদের থাকার জন্য এই বাহিনীর কেন্দ্রীয় অফিস বিভিন্ন ব্যবস্থা করে।
এইদিনে বাংলাদেশ ন্যাপ (মোজাফফর), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা ও আশেপাশের গেরিলা বাহিনীর অস্ত্র জমা নেওয়া হয়। স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কুষ্টিয়ায় মিলিশিয়া শিবিরে আজ (২৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত ১২শ’ মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত করা হযেছে। পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে জব্দ করা অস্ত্রসহ এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১১শ’ অস্ত্র ও ১১ হাজারের বেশি গুলি জমা দেওয়া হয়েছে।
পাক বর্বরতায় জানমালের ক্ষতি নিরূপণে কমিটি
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম চলাকালে পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতনের ফলে জানমালের ক্ষতির পরিমাণ জানতে কমিটি গঠন করা হয়। দৈনিক বাংলা এই খবর প্রকাশ করে। কমিটি ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। পুলিশের ডিআইজি এ রহিমকে চেয়ারম্যান করে সরকারি ও বেসরকারি সদস্যদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। সরকারি প্রেসনোটের মাধ্যমে ২৯ তারিখ এ তালিকা ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে তথ্য সরবরাহ করতে জনগণ সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে আশা করে সরকার।
৬৫ ভাগ কৃষককে খাজনা দিতে হবে না
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কৃষিভিত্তিক এই দেশের প্রধান সহায় কৃষক সমাজের কৃষি জমি ২৫ বিঘা পর্যন্ত করমুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এতে করে শতকরা ৬৫ ভাগ কৃষক প্রায় চার কোটি টাকা বার্ষিক রাজস্ব দেওয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘ভূমিহীন চাষি যাতে বড় বড় ভূমি মালিকদের হাতে শোষিত না হয় এবং জমির মালিকানা যাতে হস্তান্তরিত না হয়, সেজন্য করমুক্ত কৃষিভূমি ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারমুক্ত কৃষিসমাজ গড়ে তোলা তাদের সরকারের লক্ষ্য ছিল।’
সাক্ষাৎকারটিতে তিনি বেশকিছু বিষয়ে আলাপ করেন। বর্গাদারী ব্যবস্থা সম্পর্কে রাজস্ব মন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, ভবিষ্যতে এপ্রথা বিলোপ হওয়া প্রয়োজন এবং কৃষি ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন করে অনুপস্থিত মালিকদের চাষিকে জমির মালিকানা দিতে হবে। আমাদের দেশে বহু চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী তাদের অন্যভাবে অর্জিত টাকায় দায়গ্রস্ত থাকার সুযোগে গরিব চাষিদের জমি কিনে নেয় এবং শহরে বাস করে বর্গা প্রথা উৎপাদনের মোটা অংশ ভোগ করে। জোতদার ও ধনী কৃষকরাও একই পন্থা অবলম্বন করে। তাই ভবিষ্যতে জমির বিলিবন্টন— সরকার এসব দিকে নজর দেবে।
‘উপজাতি’দের ন্যায্য অংশ নিশ্চিত হবে
চাকরিতে ‘উপজাতীয়দের’ ন্যায্য অংশ দেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। এনার খবরে বলা হয়, ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার শ্রী বিকাশ চাকমা সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাত জনের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে উপস্থিত ছিল। বঙ্গবন্ধু তাদের আশ্বাস দিয়ে আরও বলেন, উপজাতীয়দের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করা হবে। আজকের দিনের ইংরেজি ও বাংলা উভয় পত্রিকায় সেই ছবি ও খবর প্রকাশিত হয়।
সংকটে সংবাদপত্র
নিউজ প্রিন্ট নিয়ে ‘আর্ক জুডি’ নামের যে জাহাজটি খুলনা থেকে ঢাকায় আসার কথা, সেটি গোপালগঞ্জের কাছে বিকল হয়ে পড়ে। বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ফলে সংবাদপত্র প্রকাশে বাধা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। এই কোম্পানির অন্য জাহাজ ‘আল ফারুকের’ মাধ্যমে নিউজ প্রিন্ট আনার ব্যবস্থা করলেও এতে কয়েকদিন সময় চলে যাবে।