সরকারি চাকরিজীবীদের কর্তব্য পালনে সতর্ক করেন বঙ্গবন্ধু

vgtrfপ্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘নিয়মিত অফিস না আসলে এবং দায়িত্বে অবহেলা করলে সরকারি অফিসার ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বাসসের নিউজে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু এক নির্দেশে ৩ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, সরকারি অফিসাররা কী ধরনের কাজ করছেন তা দেখার জন্য সময়ে সময়ে তিনি আকস্মিকভাবে অফিসগুলোতে যাবেন। দেশের বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে ৪ ফেব্রুয়ারি এ সংবাদ বড় করে প্রকাশিত হয়।

বঙ্গবন্ধু আদেশে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের কিছুসংখ্যক অফিসার ও কর্মচারী সময়মতো অফিসে আসছেন না এবং তারা কর্তব্যে অবহেলা করছেন বলে আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটা উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না যে, আমি ও আমার সরকার এটাই আশা করি যে, বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক দেশের কল্যাণের জন্য নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করবে। সরকারি কর্মচারীরা কী রকম কাজ করছেন, তা নিজের চোখে দেখার জন্য আকস্মিকভাবে অফিসে যাবেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও বঙ্গবন্ধু জানিয়ে দেন।

ert

এ দিনই গান্ধী শান্তি পরিষদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী রচনা সম্ভার উপহার দেওয়া হয়। ক্ষিতীশ রায় চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে তার সরকারি বাসভবনে উপহার তুলে দেন।

জহির রায়হানকে খুঁজে পেতে তল্লাশি

বড় ভাই বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সারের খোঁজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানকে খুঁজে পেতে মিরপুরে তল্লাশি অব্যাহত ছিল এই দিনেও। বঙ্গবন্ধু জহির রায়হানকে খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। গত ছয় দিন ধরে তিনি নিখোঁজ থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। এরমধ্যেই এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরার সঙ্গে পৃথক বৈঠকও করেছেন। রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘জহির রায়হানকে খুঁজে বের করতে সব পন্থাই নেওয়া হয়েছে বলে বঙ্গবন্ধু তাকে জানিয়েছেন।’ এদিকে পরিবারের সদস্যদের কাছে রহস্যজনক ফোন কল আসতে শুরু করে। জহির রায়হানের বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী রহস্যজনক ফোন কল পান। তিনি ফোনে উল্টো ধমক দিয়ে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার কথা জানালে বলা হয়, আমরা অনেক শক্তিশালী। আমরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

350

জেলা হবে ৫০টি

প্রশাসন ব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্যে সরকার বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ মহকুমাকে জেলা পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশের ৫৩টি মহকুমার মধ্যে ৫০টিকে জেলায় পরিণত করা হবে। বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদের আসন্ন অধিবেশনে এ ব্যাপারটি নিয়ে খসড়া প্রস্তাব দেওয়া হবে। সরকারি মহল মনে করেন যে, এ খসড়া প্রস্তাবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বচিত কোনও প্রতিনিধি জেলার প্রশাসনের ভার গ্রহণ করবেন, এমন ধারা থাকা বাঞ্ছনীয়। এতে অতীতের ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক মনোভাবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে বলে দৈনিক বাংলার খবরে প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে নতুন কোনও প্রদেশ গঠন করা হবে না। যেসব থানা সদরকে মহকুমায় রূপান্তর করা হয়েছিল, সেগুলোকেও জেলা সদরের মর্যাদা দেওয়া হবে না।

চাকরি প্রার্থীদের ভিড় নিয়ে প্রেসনোট

সরকারি এক প্রেসনোটে জানানো হয়, কয়েকদিন যাবত লক্ষ্য করা গেছে, নাম তালিকাভুক্ত করতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রে হাজার হাজার জনগণ ভিড় করছেন। এদের মধ্যে বহু সংখ্যক লোকই সম্ভবত এই ধারণা পোষণ করে যে, কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রে নাম তালিকাভুক্ত করলেই নিশ্চিতভাবে তাদের চাকরি হবে। সেটি যে সঠিক নয় তা জানান দিতেই এই প্রেসনোট জারি করে সরকার। এতে বলা হয়, চাকরি প্রার্থীদের জানাতেই এই প্রেসনোট যে, নাম তালিকাভুক্তকরণ সম্পূর্ণভাবে স্বেচ্ছামূলক ব্যাপার। এবং কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রের মধ্যস্থতা চাকরি সংগ্রহের ব্যাপারে চাকরি প্রার্থীদের জন্য থাকলেও এর দ্বারা চাকরি হওয়ার নিশ্চয়তা নেই।

bhy

ফেব্রুয়ারির কোনও একসময় নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশের ওপর একটি বিশেষ সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করা হয়। বাসসের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের রিলিফ তৎপরতা বিভাগের প্রধান টনি হ্যাগেন এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জরুরি রিলিফ ও পুনর্বাসনের জন্য ঢাকায় জাতিসংঘ রিলিফ তৎপরতা যে রিপোর্ট তৈরি করেছে সম্মেলনে তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।’

অপসারণের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসামরিক খেতাব গ্রহণের দায়ে বাংলাদেশ সরকারের চাকরি থেকে যাদেরকে অপসারণ করা হয়েছে, তারা তাদের বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপিল করতে পারবেন। ৩ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে এক বিশেষ নির্দেশে জানানো হয়, অপসারণ নির্দেশ লাভের সাত দিনের মধ্যে তাদের আপিল করতে হবে। এর আগে বেসরকারি খেতাব গ্রহণের অভিযোগে ৫৩ জনকে অপসারণ করা হয়েছিল। তাদের অপসারণের সরকারি সিদ্ধান্ত ১ ফেব্রুয়ারি জনসম্মুখে আনা হয়েছিল।