বাংলাদেশ সরকারের লুকোবার কিছু নেই: জাতিসংঘকে বঙ্গবন্ধু

3জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা চাইলেই যেকোনও জায়গায় যেতে পারেন। সরেজমিনে সবকিছু দেখার আহ্বান জানিয়ে তাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশের লুকোবার কিছু নেই।’ ১৯৭২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সংস্থাটির খোদ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি সাংবাদিকদের একথা বলেন। এদিকে ইন্দিরা গান্ধী এক বাণীতে বলেছেন, কলকাতায় সাক্ষাৎ ও আলাপের ভিত্তিতে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে সমঝোতার উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছেন তিনি এবং আবারও এধরনের সাক্ষাতের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি।

জাতিসংঘকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান

বাংলাদেশ সরকারের লুকোবার কিছু নেই বলে বঙ্গবন্ধু জানিয়ে দেন জাতিসংঘকে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের বিশেষ প্রতিনিধি মিস্টার ভিক্টোরিও উইন্সপিয়ার গুইসিয়ার্ড ১১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এ মন্তব্য করেন। বাসসের খবরে বলা হয়, গুইসিয়ার্ড এদিন সকালে ঢাকা পৌঁছান এবং আধাঘণ্টা আলাপ-আলোচনার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাকে বলেছেন যে, বাংলাদেশ বিশ্ব সংস্থার সদস্য না হলেও এতে তার গভীর আস্থা রয়েছে। কাজেই জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে এখানে স্বাগত জানানো হচ্ছে।’ গুইসিয়ার্ড আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু তাকে সরেজমিনে সবকিছু দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তিনি (গুইসিয়ার্ড) যেখানে খুশি যেতে পারেন। কারণ, বাংলাদেশ সরকারের লুকোবার কিছু নেই।

পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী শামসুল হক পূর্ববর্তী স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলো ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি যথাযথ আইন প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত, এই সমস্যাগুলো পরিচালনার লক্ষ্যে গৃহীত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারি সিদ্ধান্তের রূপরেখা প্রদান করেন।

2

বঙ্গবন্ধুর কাছে ইন্দিরার বাণী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে এক বাণী পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি এ অভিমত প্রকাশ করেন যে, সম্প্রতি তার সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের আলোচনায় তিনি সমঝোতার উন্নততর দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ বাংলাদেশকে পরিচালিত করেছে।’’

ইন্দিরা গান্ধী তার বাণীতে সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের অনুরূপ আরও বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, তিনি (ইন্দিরা গান্ধী) নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেন যে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ ধরনের মতবিনিময়ের ফলে আমাদের দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা আরও  জোরদার হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাকে যে উপহার প্রদান করেছেন, তার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ইন্দিরা গান্ধী। তিনি বলেন, ‘তাকে যেসব চিত্রকল্প দেওয়া হয়েছে, তা ঘরের জন্য বাঁধানো হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধুর পরিবার-পরিজনের জন্য অভিনন্দন পাঠানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণের জন্যও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা পাঠাতেও ভোলেননি তিনি।

সমবায় আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান

বাসসের খবরে প্রকাশিত হয়, এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় দফতর মন্ত্রী শামসুল হক সমবায় আন্দোলনের ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন। গ্রামবাংলার সুসংহত পুনর্গঠনের জন্য স্থানীয় জনগণের নেতৃত্বে সমবায় আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার গ্রাম কর্মী বাহিনী গঠনের  কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা হবে ৪০ হাজার। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে থেকে এই কর্মী বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে ১০ জন করে সদস্য নেওয়া হবে। এই বাহিনীতে বেকার তরুণদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী জুন মাসের মধ্যে গ্রাম এলাকায় সুসংহত উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গ্রাম কর্মী বাহিনীর জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হবে, তার জন্য আলাদাভাবে আরও দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।’ জাতিকে দ্রুত পুনর্গঠনের জন্য আগামী মাস থেকে এই কর্মসূচি কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি। একই সভা থেকে মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা পৌরসভাকে করপোরেশনে রূপান্তরের প্রশ্নটি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।’

1

বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট তিন সপ্তাহের মধ্যে

যোগাযোগমন্ত্রী মনসুর আলী ১৯৭২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত কমিশন আসছে। তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন তারা। তদন্ত কমিশনে কে কে থাকবেন ১২ ফেব্রুয়ারি তা চূড়ান্তভাবে স্থির করা হবে।’

এদিকে নিহত বৈমানিক ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুল খালেক ও ক্যাপ্টেন নাসির হায়দারের নামাজে জানাজা বেলা পৌনে দুইটায় পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল সংখ্যক জনগণের সঙ্গে নামাজে জানাজায় যোগদান করেন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও যোগাযোগমন্ত্রী আতাউল গণি ওসমানী।  আজিমপুরে নিহতদের লাশ দাফনের সময় বঙ্গবন্ধু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত প্রশিক্ষণরত বৈমানিক মোস্তফাসহ আরেকজনের লাশ ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে খুলনায় তাদের নিজ নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।