বিজয়ের পর ছাত্রনেতাদের প্রথম দাবি ‘সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার’

1

এখনও নিশ্চিত হয়নি সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার। এই দাবি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই জোরেশোরে উঠেছিল। আর এতে ভূমিকা রেখেছিলেন সেসময়ের ছাত্রনেতারা। ১৯৭২ সালে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা দাবি তুলেছিলেন—বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ভাষায় পরিচালিত বিদ্যালয়ে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলা চালু হতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেটি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিজয় লাভের প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও সেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেওয়া সেসময়ের ছাত্রনেতারা বলছেন, রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে ব্যবহার না করে বাংলা ভাষাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ২০ জানুয়ারি প্রথমবার সর্বস্তরে বাংলা নিশ্চিত করতে ছাত্রনেতারা চাপ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব, শাজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখন যৌথ বিবৃতিতে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আইন-আদালতে বাংলা ভাষা চালুর অনুরোধ করেন। তাদের দাবি— বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ভাষায় পরিচালিত বিদ্যালয়ে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলা চালু হতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেটি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিবৃতিতে তারা বলেন— ২৯ বছর আগে জাতীয় জীবনের সবক্ষেত্রে বাংলা চালুর দাবিতে যে বীর শহীদরা জীবন দিয়েছিলেন এবং যার পথ ধরে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা, সেই অমর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদনের উপায় হচ্ছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ২৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা, সর্বস্তরে চালু করা হবে। স্টেট ব্যাংকের নাম হবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহার না হওয়ায় দেশের ১৪ বুদ্ধিজীবী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সরকার জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহারের ঘোষণা দিলেও এখনও কিছু প্রতিষ্ঠান সেটি মানছে না উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষার কিছু প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে বাংলাকে এড়িয়ে চলছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ কোনওভাবেই সাময়িক শ্রেণি বিভেদ সৃষ্টিকারী নানা মাধ্যমের শিক্ষা ব্যবস্থা মেনে নেবে না। শিক্ষাকে গণমুখী, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক করে তুলতে হলে বাংলাদেশে একমাত্র বাংলা ভাষার মাধ্যমে অভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে।’ এ ব্যাপারে সচেতন ছাত্রসমাজকে হুঁশিয়ার থাকার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন— ড. এনামুল হক, ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, কবীর চৌধুরী, মযহারুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, নিলিমা ইব্রাহীম, আহমদ শরীফ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. আনিসুজ্জান, মনিরুজ্জামান ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। 

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম (আবু সাঈদ মোহাম্মদ) আবদুর রব বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এক সভায় বলেন, ‘ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কর্মে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করায় মূলত ভাষা বিকশিত না হয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা এই দাবি জানিয়ে আসছি। এখন বলাবলি শেষ, এখন আমরা কার্যকর করতে তৎপরতা চালাবো। তিনি বলেন, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগে সমস্ত দোকানপাট থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, কাজকর্ম সবাইকে বাংলা প্রচলনের ব্যবস্থা নিতে নোটিশ দেওয়া হবে। সেটিও যদি তারা না মানতে চান তবে আমরা আরও  কঠোর সিদ্ধান্ত নেবো।