গোপনে অস্ত্র জমা দিলেও ক্ষমা করা হবে: বঙ্গবন্ধু

কেউ থানায় গোপনে অস্ত্র জমা দেয় তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। কিন্তু গুন্ডাদের বরদাশত  করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রয়ারি পত্রিকা বের না হওয়ায় ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘দৈনিক বাংলা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে একথা বলা হয়।  ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারির  সভায় বঙ্গবন্ধু এ বক্তব্য  দেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বরকতের কবরে তার মায়ের  ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ছবিসহ খবরটি।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘থানায় গোপনে অস্ত্র জমা দিলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু না দিলে কাউকে খাতির করা হবে না।’ তিনি তাদের লুণ্ঠিত সম্পদ জমা দিতে বলেন।

তিনি বলেন,  অবাধ রাজত্বের জন্য স্বাধীনতা আনা হয়নি। শুরুতেই সমাজ থেকে দারিদ্র উৎখাত করতে না পারলে স্বাধীনতা হবে অর্থহীন।

১৯৭২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির পত্রিকা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই পাকিস্তানি সেনাদের সবকিছু শেষ করে গেছে। হয়তো তিন বছর আমাদের কষ্ট হবে।’ বঙ্গবন্ধু তার দলের কর্মী ও ছাত্র সমাজকে আইনের প্রতি অনুগত নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় ও গোপন অস্ত্র উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা নিয়োজিত করার আহ্বান জানান।

শুধু পতাকা তুললেই স্বাধীনতা আসে  না উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনগণের জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানই স্বাধীনতা। স্বাধীনতা রক্ষা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে দুরূহ।’

একুশেতে প্রথমবার যা হলো

১৯৭২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন দেশের প্রথম শহীদ দিবস। সেইদিন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ছিল নানা ব্যতিক্রমী আয়োজন। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত, দোকানপাট বন্ধ, ভারতসহ অন্যান্য বিদেশি অতিথিদের আগমন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সেবারই প্রথম মিনারেও গোরস্থানে প্রধানমন্ত্রী এলেন। বাংলা একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি এসেছিলেন। সর্বাধিক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাস্তায় রাস্তায়। শহীদ মিনার থেকে টিভি রেডিও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল। পল্টনে দুই বাংলার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও সত্যজিৎ রায়ের উপস্থিতি ছিল উৎসাহ উদ্দীপক এক আয়োজন। একাধিক গ্রন্থপ্রকাশ ছাড়াও এই দিনে নতুন পাঁচটি  দৈনিক পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।

১৯৭২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির পত্রিকা

প্রথম একুশের প্রহরে শ্রদ্ধা

তখন রাত ১২টা, শিশির ঝরছে। ভীষণ শীত ছিল সেদিন। আজিমপুর গোরস্থানে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের কবরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করে একুশের মিছিল। ঠিক তখন তিনি এলেন। হাতে বিরাট পুষ্পস্তবক। অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে নিঃশব্দে এগুলেন কবরের দিকে। তিনি আবুল বরকতের মা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কাঁপাকাঁপা হাতে ফুলের স্তবক রাখলেন ছেলের কবরে। মৃদু উচ্চারণে অস্পষ্ট শব্দ কবরের গায়ে হাত বোলালেন কিছুক্ষণ তিনি। তার চোখে অশ্রু  ছিল না। কিন্তু বাকি সবাই চোখ মুছলো। ১৯৭২ সালে একুশের প্রথম প্রহরে তিনি প্রথম ভাষা শহীদের কবরে ফুল দিলেন।

কমনওয়েলথের সদস্যপদ

বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ ২২ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জানান,  খুব শিগগিরই বাংলাদেশ কমনওয়েলথের সদস্যপদ পাচ্ছে।  এটা পাওয়া এখন একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল পররাষ্ট্র দফতরে  বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

১৯৭২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির পত্রিকা

শাসনতন্ত্রে  সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি অন্তর্ভুক্তির দাবি

দেশে অর্থের সুষম বণ্টন ও বিনিয়োগ করে সব ধরনের শ্রেণি শোষণ বন্ধ করা এবং  কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে শাসনতন্ত্রে  সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান  ছাত্রলীগ নেতারা। শহীদ ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত জনসভায় তারা এ আহ্বান জানায়। এছাড়া ছাত্র সমাজের ঐতিহাসিক ১১ দফায় শিক্ষা বিষয়ক যেসব দাবি করা হয়েছিল তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে অভিনব কর্মসূচি ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি জনাব নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আ  স ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও বক্তৃতা করেন।