বিপদগ্রস্ত মানুষদের অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা, বাধ্য হয়ে বাইরে বের হওয়া মানুষদের ‘সামাজিক দূরত্ব’-এর ধারণা দেওয়াসহ কাজ না থাকা দিনমজুর মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন এই স্বেচ্ছাসেবক তরুণরা। করোনাভাইরাস মোকাবিলার অংশ হিসেবে তাদের কেউ কেউ অনলাইন ওয়ার্কশপসহ, প্রয়োজনীয় ট্রেনিংয়েরও আয়োজন করেছেন এরই মধ্যে।
এর উদ্যোক্তা গণমাধ্যমকর্মী তুষার আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখন যে সময় পার করছি, তখন মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ। এই তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। সাধারণ ছুটি বা অনানুষ্ঠানিক লকডাউনের সময় এই তরুণদের সক্রিয় রাখতে চেয়েছি। রাজধানীসহ সারাদেশে মহল্লা, উপজেলা, জেলাভিত্তিতে তরুণরা আমাদের ডাকে সাড়া দেন। এবং তারা ঘরে বসেই টেলিফোনে মানুষের সমস্যার কথা শুনছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। নিম্ন আয়ের মানুষ, পথশিশু, বৃহন্নলাদের কাছেও তারা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন।’
মাত্র সাড়ে ৪০০ টাকার বিনিময়ে রোজ বেশকিছু ঘরে খাবার জুটবে। চাল, ডাল, আলু। বাঁচার জন্য। এই ইভেন্ট পেজ করে কাজ করছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এ পরিস্থিতির আগেই কিছুটা টের পেয়েছিলাম। আমাদের বাসার কাজের সহকারী বলছিলেন, অনেকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিচ্ছে। আমিও ৩-৪টা বস্তিতে খোঁজ নিলাম, তারাও একই কথা বলছিলেন। আমি জানি, ঢাকা শহরে প্রায় ৪০ লাখ নিম্ন আয়ের বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষ আছে। তাই কিছু একটা করার তাগিদ বোধ করলাম সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে।’
রাজশাহী থেকে কাজ করছেন ‘কিছু করতে চাই’ নামে একটি পেজের মাধ্যমে কিছু তরুণ। তারা বলছেন, লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো হলো যারা দিন আনে দিন খায়। শুধু তাদের জন্য কিছু করতে চাই।
নারায়ণগঞ্জে কিছু উদ্যোমী ছেলেমেয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে বেশ কয়েকটা মহল্লা, ব্যাংকের বুথ, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, খাবারের দোকানে ফিজিক্যাল ডিসটেন্স মার্কিং আর জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করছে।
তিনি বলেন, “‘ক্লাইমেটঅ্যাকশন টিম’ দৈনিক ২০০ টাকার আয়ে নির্ভরশীল পরিবারকে টানা ২ মাস জরুরি খাদ্য বিনামূল্যে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। কাজে লাগানোর মতো একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উঠলেই তালিকাভুক্ত শ্রমজীবী পরিবারদের খাবার সংগ্রহ করা শুরু হবে।’
সুমন মাহবুব বলেন, ‘আজ থেকে টিম নতুন আরেকটি কাজে যাচ্ছে। করোনা লকডাউনের এই সময়ে বাইরে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ঘুরে বেড়ানো কুকুর না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। এগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন কাজ। তবে কমিউনিটির উদ্দেশে একটা বার্তা পাঠানোর লক্ষ্যে আমরা কুকুরদের খাওয়াবো।’
তিনি আরও বলেন, “‘ক্লাইমেটঅ্যাকশন টিম’ মনে করে করোনা কোনও ল্যাবে তৈরি ভাইরাস নয়। কারণ, করোনাভাইরাসের যে ডুয়েল প্রোটিন এলিমেন্ট স্পার, ফ্যাট আউটার সারফেস ও তথাকথিত ক্লিভেজ—এই ত্রয়ের সমন্বয়ে এটি খুব সহজে মানুষের ফুসফুসের কোষ ভেদ করে ঢুকে যেতে পারে। ভাইরাসের শরীরের এই সুবিধাগুলো ল্যাবে তেরি করা সম্ভব নয়। তবে জৈব বিবর্তনের ভেতর দিয়ে মিউটেশন হয়ে হয়ে এটি আজকের জায়গায় এসেছে। ফলে করোনা একটি প্রকৃতির সংকট।’