অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করলেন বঙ্গবন্ধু

১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল প্রকাশিত পত্রিকাঅসাধু ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে অসৎ চর্চা বন্ধ না করলে ডিলার, এজেন্ট সবার লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’ ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস ময়দানে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মানুষের হয়রানির সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়িয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এই অনায্যতা মেনে নেওয়া হবে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখে দিতে জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সতর্ক থাকুন

ষড়যন্ত্রকারীদের ফের সতর্ক বার্তা দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন,  ষড়যন্ত্র চালিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে বিপদের ‍মুখে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জনগণকে তিনি আবার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে বলেন। তিনি ঘোষণা করেন,  ‘যদি স্বাধীনতা রক্ষার বিষয় আসে তাহলে আমার দেশের কোটি মানুষ এগিয়ে আসতে পিছপা হবে না। কেননা ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা চোখের সামনে ধুলিসাৎ হয়ে যাবে তা বরদাশত করা হবে না।’

দুষ্কৃতকারীরা রাজাকার আলবদর

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন,  ‘আমার আহ্বানে সোয়া একলাখ মুক্তিযোদ্ধা তাদের অস্ত্র ইতোমধ্যে জমা দিয়েছেন। এখনও কিছু মানুষ তাদের অস্ত্র জমা দেয়নি এবং এরাই দেশব্যাপী সংঘঠিত নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের কাছে খবর আছে। এদের ধরিয়ে দিতে জনগণ সহায়তা করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। এরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে রাখতে চায়।’

পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর কিছু দালাল ভোল পাল্টিয়ে সামনে এসে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় আছে। এদের গণশত্রু উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু জনসভায় বলেন,  ‘এদের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। যেকোনও সময় এরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ খুঁজবে।’

৫০ মিনিটের এই বক্তৃতায় সেদিন মাইক্রোফোনের জটিলতা দেখা যায় বেশ কয়েকবার। কিন্তু বিপুল সংখ্যক জনগণ তাদের নেতার প্রতিটি বাক্য শুনতে উদগ্রিব ছিল।

১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল প্রকাশিত পত্রিকা

প্রয়োজনে আরও দালাল গ্রেফতার হবে

পাকিস্তানের দোসরদের বিষয়ে বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলে পাকিস্তানি হানাদারদের সহায়তা করার অভিযোগে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রয়োজনে একই অভিযোগে আরও অনেককে বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে। কোনও অবস্থাতেই দালালদের ক্ষমা করা হবে না। তাদের বিচার হবে এবং হতেই হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন,  ‘এমনিতে আমি নরম মনের মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশকে রক্ষায় এবং এদেশের মানুষের জন্য ক্ষতির বা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু তৈরির আশঙ্কা দেখা দিলে আমি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবো না। বিনা অপরাধে কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। প্রত্যেক ব্যক্তি আইনগতভাবে শাস্তির মুখোমুখি হবে।’

শিক্ষার্থী ও শ্রমদের প্রতি আহ্বান

ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সোনার বাংলা গঠনে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয়করণ বিষয়ে কথা বলেন। যদি প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে কঠোর পরিশ্রম না করে এবং ভূমিকা না রাখে তাহলে কোনোভাবেই এই জাতীয়করণের উদ্যোগ সফল করা যাবে না বলেও বলেন তিনি। তিনি বলেন,  ‘এসব উদ্যোগের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত হতে হবে এবং এটি তখনই কার্যকর হবে যখন জনগণ যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশকে পুনর্গঠনে ভূমিকা পালনে উদ্যোগী হবে।’ তিনি  তিন বছরের মধ্যে ভেঙে পড়া অর্থনীতি সবল করা সম্ভব বলেও আশা প্রকাশ করেন।

ফুলবাড়িয়ার জন্য ৫লাখ

১ এপ্রিল ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ঘূর্ণিঝড় কবলিত মানুোষর জন্য ৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেন বঙ্গবন্ধু। ফুলবাড়িয়া স্কুল ময়দানে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, প্রয়োজনে আরও অর্থসহ অন্যান্য সহযোগিতা আক্রান্ত মানুষদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। না খেয়ে একজনকেও তিনি মরতে দেবেন না বলে ঘোষণা করেন। বলেন,  ‘ঘটনা শুনেই আমি বাণিজ্যমন্ত্রী সৈয়দ নজরুলকে এলাকায় পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।’