ঘোড়দৌড় ও মদ্যপান চলবে না: বঙ্গবন্ধু


৭৭৭৭

‘ঘোড়দৌড় আর মদ্যপানে কোনও জাতি বা দেশের কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। তাই বাংলাদেশে এসব সামাজিক অনাচারের স্থান হবে না’, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৬ এপ্রিল ঢাকায় একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন। এর আগেও তিনি একাধিকবার এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের তিন দিনের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারি এক সরকারি অদেশের মাধ্যমে দেশে মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করেছিলেন। এমনকি তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে জুয়া, মাদক, ব্যভিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিধানও সংযোজন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন ঘোড়দৌড় ও মদ্যপান চলবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের ঔপনিবেশিকবাদের তথাকথিত ইসলামি শাসনামলে মদ্যপান যথেচ্ছাচারভাবে চলেছে। এসব পাপাচার বহু পরিবারে অশান্তি ডেকে এনেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এসব পাপাচার বরদাস্ত করা হবে না। ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে ঘোড়দৌড় শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এসব কথা বলেন।

ইউনিয়নের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের সমস্যার কথা জানাতে গিয়েছিলেন। বাসসের খবরে বলা হয়, হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আশ্বাস দেন যে তাদের বিভিন্ন পার্কের কাজে নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, তার সরকার দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য সম্ভাব্য সবরকম চেষ্টা করছে। সপ্তাহ শেষের অন্যান্য ছুটির দিনের মতো গতকালও (১৫ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণভবনের সমবেত জনসাধারণের বক্তব্য শোনার জন্য সরকারি মহল থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন। বঙ্গবন্ধু সমাজের বিভিন্ন স্তরের বক্তব্য শোনেন। এদের মধ্যে বহু সংখ্যক ছিল নারী। তিনি তাদের বক্তব্য শোনার পর প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করেন।

Untitledহ্যানয় ও হাইফংয়ে বোমাবর্ষণ

দীর্ঘ বিরতির পর মার্কিন বিমানবাহিনী ১৬ এপ্রিল আবারও উত্তর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে হামলা চালায়। হ্যানয় বেতারের খবরে প্রকাশ—মার্কিন বিমানবহর ১৬ তারিখ বোমাবর্ষণ শুরু করে। গতরাতে (১৫ এপ্রিল) ও আজ ভোরে (১৬ এপ্রিল) মার্কিন জঙ্গি বিমানগুলো হাইফং শহরের ওপরে বোমাবর্ষণ করে।

তাজউদ্দিনদখলদার মার্কিন সৈন্য হটাও

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে ভিয়েতনামে মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা করা হয়। মার্কিনিরা নতুন করে সে দেশে যে যুদ্ধ শুরু করেছে অবিলম্বে তা বন্ধ করা ও ভিয়েতনামের মাটি থেকে মার্কিন সৈন্য অপসারণের দাবি জানানো হয়। সমাবেশে ভাষণদানকালে বিভিন্ন বক্তা সাম্রাজ্যবাদের তীব্র নিন্দা করে অবিলম্বে হামলা বন্ধের দাবি জানান। ১৬ এপ্রিল এ সমাবেশে ভাষণদানকালে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ তেজোদীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দিন ফুরিয়েছে। ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রাম বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ সাম্রাজ্যবাদের ব্যাপক হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ আফ্রো-এশিয়া সংহতি পরিষদ ও বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ।

মুজিবনগর সরকারের এক বছর

আগামীকাল ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বার্ষিকী উদযাপিত হতে যাচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে, গত বছর এই দিনে মেহেরপুর মহকুমার একশ’ গ্রামগঞ্জের বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবী এবং দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রথম বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এরপর থেকেই অঞ্চলটি মুজিবনগর নামে পরিচিত। দিবসটি উপলক্ষে মেহেরপুরের জনগণ তিন দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে কৃষি ও শিল্প প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক ও পল্লীগীতি অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।