প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২৯টি আন্তর্জাতিক ও বিদেশি সাহায্য সংস্থার আশ্রয়ে প্রায় দুই সহস্রাধিক বহিরাগত বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের মাঝে প্রায় চারশ’ ব্যক্তির বাংলাদেশ ভ্রমণের বৈধ ও উপযুক্ত অনুমতিপত্র নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাযদেশে সাহায্য বিতরণের নামে তারা মূলত রাজনৈতিক তৎপরতায় বেশি উৎসাহী বলে জানা যায়। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শপথে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা না হচ্ছে, ততদিন সংগ্রাম চলবে। বাংলার বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। এর আগে ও পরে বেশ কয়েকটি জনসভায় তিনি একই শঙ্কা ব্যক্ত করেন।
দৈনিক বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব বহিরাগত ব্যক্তি গ্রামাঞ্চলের ঢুকে পড়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের বর্ণনা সংবলিত মানচিত্র থাকে। বন্ধু সেজে জনগণের মাঝে নানা ধরনের রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কিছু আমলার সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে করছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে তারা যুবক ও ছাত্রদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের ব্যক্তিগত পরিচয় সংগ্রহ ও তা লিপিবদ্ধ করেছে। আমলাদের কাছে তারা জানতে চাচ্ছে, মস্কো সফরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বিষয়ে।
গণপরিষদের বাজেট অধিবেশন
গণপরিষদের পরবর্তী বৈঠকে বাজেট অনুমোদিত হবে। দেশের জন্য একটি শাসনতন্ত্র অনুমোদন ছাড়াও বাংলাদেশে গণপরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে প্রথম বাজেট অনুমোদন করা হবে। অনুমোদনের পর অধিবেশনের সময় আরও সম্প্রসারিত করা হবে বলে বাসসের খবরে প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে সম্প্রসারিত অধিবেশন বাজেট অধিবেশন হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানানো হয়।
এইদিনে মন্ত্রিসভার দীর্ঘতম বৈঠক সমাপ্ত হয়। সেখানে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের উদ্ধারের প্রশ্ন আলোচিত হয়। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান ডিপি ধর পাকিস্তানের সঙ্গে দূত পর্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, সেটি বিবেচিত হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দূত পর্যায়ের বৈঠকে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করবে বলে জানান ডিপি ধর। তবে পাকিস্তান পূর্ব শর্ত আরোপ করলে ভারত আলোচনায় বসবে না বলেও জানিয়ে দেন ভারতের পররাষ্ট্র বিভাগের নীতি নির্ধারণ কমিটির এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে হলে পাকিস্তানকে সেটা বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি করতে হবে।’
বাংলাদেশ সফর শেষে দিল্লি যাত্রার প্রাক্কালে ঢাকা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন বলে বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হয়। ডিপি ধর বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ বিষয়ক কিছু আলোচনা করবো না।’
এদিন বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের ত্রাণ দফতর পরিদর্শন করেন। ধানমন্ডির এই অফিসে তিনি জাতিসংঘের কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।