পেশায় আত্মনিয়োগ করতে চিকিৎসকদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান

১২৩৪৫৬

পেশাগত চর্চার জায়গায় থেকে মানবীয় ভোগান্তিগুলো কমাতে কাজে আত্মনিয়োগ করতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে এর বিকল্প নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চার দিনব্যাপী প্রথম কাউন্সিলে এক বার্তায় বঙ্গবন্ধু এসব কথা বলেন। তিনি চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘মানবতাবাদের আদর্শ আপনাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, যা আপনাদের পেশাগত কাজকে আরও এগিয়ে নেবে।’

১৯৭২ সালের ২২ এপ্রিলের পত্রিকায় আগের দিনের এই সম্মেলনের সংবাদ প্রকাশিত হয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করতে পারেন।’ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার ফল পেতে চিকিৎসকদের আরও মানবিক আচরণের কথা বলেন বঙ্গবন্ধু।

খুলনা থেকে পাঠানো এদিনের দৈনিক বাংলার আরেক খবরে বলা হয়, একশ্রেণির চোরাকারবারি, যারা ব্যাপকহারে সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশি সামগ্রী পাচার এবং ভারত হতে সে দেশে তৈরি দ্রব্যাদি আনার কাজে লিপ্ত ছিল। বর্তমানে এখানে প্রবল জনমত গড়ে ওঠার দরুণ তারা আর ব্যাপক হারে চোরাচালান করতে পারছে না। সাতক্ষীরা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, সীমান্ত এলাকার অনেক জায়গায় জনগণ সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধে চোরাকারবারিদের বহু প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। কিছু দিন আগে সেখানে জনগণ ভারতে পাচারের পূর্ব মুহূর্তে কয়েকটি নৌকাভর্তি মাছ আটক করে এবং পরে সেসব মাছ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। সেখানে অনুরূপ অপর একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চোরাচালান সামগ্রী বিনামূল্যে জনগণকে দেওয়া হয় এবং চোরাচালানিদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হয়।

১৯৭২ সালের ২২ এপ্রিল দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত কার্টুনযুদ্ধ পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিকে যখন ঢেলে সাজানোর কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার, তখন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর তৎপরতায় বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু বারবারই তার বক্তৃতায় এসব বিষয়ে সাবধান হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছিলেন এবং স্থানীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার তাগাদা দিচ্ছিলেন। এর আগে গত ২ এপ্রিল দিনাজপুরে এক জনসভায় সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণকমিটি গঠনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরকালে যে কয়েকটি ইস্যুতে দুই দেশের আলাপ-আলোচনা ও চুক্তি হয়েছে, তার মধ্যে চোরাচালান প্রতিরোধ অন্যতম।

পাকিস্তান সত্য বলছে না

স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকিস্তানি সৈন্য নিহতের সংখ্যা নিয়ে পাকিস্তান একটি বিবৃতি দেয়। তারা যে সংখ্যা বলে সেই সংখ্যা সঠিক নয়, সেটি নিয়ে বাংলাদেশ প্রান্ত থেকে বিবৃতি দেন এম এ জি ওসমানী। মুক্তিবাহিনী মাত্র পাঁচ হাজার ৪০০ পাকিস্তানি সৈন্যকে নিহত করেছে বলে সংবাদপত্রে ২১ এপ্রিল ১৯৭২ যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার সদস্য জেনারেল এম এ জি ওসমানী তার প্রতিবাদ করেন। যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। এর কয়দিন আগে ৭ এপ্রিল তিনি দায়িত্ব ভার ত্যাগ করেন। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। সেখান থেকে এ বিবৃতি দিয়ে জেনারেল ওসমানী বলেন যে, ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে সেপ্টেম্বর মাস সময় পর্যন্ত খুব কম করে হলেও ২৫ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছে। এই সংখ্যা বিভিন্ন দিক থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উদাহরণস্বরূপ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে শত্রু সৈন্য নিহতের সংখ্যা তুলে ধরেন তিনি। যেমন, এপ্রিল মাসে আশুগঞ্জ-মাধবপুর যুদ্ধে ৩০০, এপ্রিল-মে সিলেটের মৌলভীবাজার তেলিপাড়া যুদ্ধে এক হাজারের বেশি, এপ্রিলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক হাজার, মার্চ-এপ্রিলে চট্টগ্রামে তিন হাজার শত্রু সৈন্য নিহত হয়। এভাবে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে নিহত সৈন্য সংখ্যা তিনি তুলে ধরেন। এছাড়া, মুক্তিবাহিনীর হাতে ১৯৭১-এর ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয়রা যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগে পর্যন্ত এবং পরে ১২ দিনের সর্বাত্মক যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে কতজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখার পর যথাসময়ে জানানো হবে বলেও বিবৃতিতে তিনি জানান।