আমাকে উপহার পাঠাবেন না: বঙ্গবন্ধু

 

111সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান হিসেবেই কেবল নয়, নানা ব্যক্তি সম্পর্কের মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। প্রতিনিয়ত ছেলে, শিশু ও বৃদ্ধ— কেউ না কেউ কিছু উপহার তাঁর কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতেন। ঠিক একইভাবে তাঁর সাক্ষাৎ প্রার্থীরাও ছিলেন। সে কারণে কাজের ক্ষতি যেন না হয়, তাই জনগণের সুবিধা-অসুবিধা জানতে সাক্ষাতের দিন ও সময় কমাতে বাধ্য হন বঙ্গবন্ধু। উপহারের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ীদের কাছে অনুরোধ জানান যে, তারা যেন উপহার পাঠিয়ে তাঁকে বিব্রত না করেন। বাসস পরিবেশিত খবরের বরাত দিয়ে ২৫ এপ্রিলের দৈনিক বাংলা পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর কাছে জাতিসংঘ প্রতিনিধি

বাংলাদেশকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এ পর্যন্ত ১৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরমধ্যে আছে ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের ৬ লাখ ৮০ হাজার টন খাদ্যশস্য—জাতিসংঘ প্রতিনিধি টনি অ্যাগেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে সাহায্য দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল মিস্টার কুট ওয়ার্ল্ড হেইমকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশে ত্রাণ তৎপরতায় নিয়োজিত জাতিসংঘের কর্মকর্তাদেরও ধন্যবাদ জানান।

মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক

২৪ এপ্রিল সোমবার মন্ত্রিসভার এক দীর্ঘস্থায়ী বৈঠকে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সচিবালয়ের ক্যাবিনেট কক্ষে কয়েকঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে চাকরি, দেশ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রণয়ন, আসন্ন বাজেট অধিবেশন ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। ২৫ এপ্রিল বিকালে প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের গণভবনে ডেকে পাঠান, তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হন।

দেশের প্রথম আমদানি নীতি ঘোষণা

বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব সিদ্দিকী বাংলাদেশের প্রথম আমদানি নীতি ঘোষণা করেন এই দিনে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাণিজ্য মৌসুমের জন্য ঘোষিত এই আমদানি নীতিতে আমদানিযোগ্য পণ্যের একটি মাত্র তালিকা রয়েছে। আগে আমদানিযোগ্য আইটেমের তালিকা ছিল চারটি।

22222বাসসের খবরে প্রকাশ, ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় এক টেলিভিশন ভাষণে বাণিজ্যমন্ত্রী আমদানি নীতি ঘোষণা করেন এবং নীতির মূল বিষয়গুলো বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘যত বেশি সম্ভব সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আমদানির ব্যবস্থা করা সরকারের লক্ষ্য হলেও বেসরকারি খাতে আমদানির সুযোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলো আমদানি চাহিদা পূরণের মতো নয় বলেই ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে পুনর্বাসিত করার আবশ্যকতার জন্য বেসরকারি খাতে আমদানির বিধান রাখা হয়েছে।’

আমদানি নীতিতে বলা হয়, সব এলাকার সর্বস্তরের জনগণকে আমদানি বাণিজ্যে সুযোগদানের জন্য, প্রতিটি থানা থেকে অন্তত ১০ জনকে আমদানি লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যতদূর সম্ভব সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আমদানি করা হবে।

যেসব বিলাস পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে মোটরগাড়ি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রপাতি, রেফ্রিজারেটর, বৈদ্যুতিক কারিগরি বড় ঘড়ি, দামি কলম, বাইনোকুলার, চীনা মাটির বাসনপত্র, প্রসাধন সামগ্রী ইত্যাদি। এই আমদানি নীতিতে ব্যবসায়ী আমদানিকারকদের ক্যাটাগরি প্রথা বিলুপ্ত করা হয়েছে।