বঙ্গবন্ধুর হুঁশিয়ারি: বিদেশি অর্থে দালালি চলবে না

 

ফিরে দেখা ১৯৭২

ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে, তা বন্ধ করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ৫ মে পোস্তাগোলায় ঢাকা কটন মিলস প্রাঙ্গণে এক শ্রমিক সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা দেন। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে তিনি তা বন্ধ করার জন্য আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন।

যারা কখনও গঠনমূলক চিন্তা না করে লম্বা লম্বা কথা বলে তাদের সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এরা কচ্ছপের মতো আবার মাথা বের করেছে।’ বঙ্গবন্ধু জানান, তিনি এসব লোকের সব কীর্তিকলাপ ফাঁস করে দেবেন। এসব লোক সক্রিয়ভাবে আইয়ুব ও ইয়াহিয়া সরকারের সেবা করেছে। বিদেশি শক্তির টাকা পেয়ে দালালরা আবার চাঙা হয়েছে। তারা আবারও একই তৎপরতা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘বিপুল সমস্যার বোঝা নিয়ে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে সবে মাত্র চার মাস। এই অল্প সময়ে সাফল্যের সঙ্গে বহু সমস্যার মোকাবিলা করা হয়েছে।’ তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘মানুষ কি নির্ভয়ে চলাফেরা করে না? বাস রেল চলে না?’ সমবেত জনতা হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। এরপর বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘অথচ মাত্র চার মাসেই এইসব লোক সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে।’

 

1

সেক্রেটারিয়েট স্থানান্তরিত হবে শেরেবাংলা নগরে

বাংলাদেশ সরকারের সেক্রেটারিয়েট ও মন্ত্রীদের দফতরগুলো শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তর করা হবে বলে সংবাদপত্রের খবরে জানানো হয়। ১৯৭৩ সালের মধ্যেই এই স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন হবে বলেও পরিকল্পনা করা হয়। স্থানান্তরের পর বর্তমান সেক্রেটারিয়েট ভবনগুলোতে বিভিন্ন ডাইরেক্টরের কার্যালয় স্থাপিত হবে বলে সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়। শেরেবাংলা নগরের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সরকারি প্রশাসন সংক্রান্ত সব কাজই সেখান থেকে পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়। পরিষদ অধিবেশনও বসবে সেখানকার জাতীয় পরিষদ ভবনে। এদিকে গুলশানকে পুরোপুরিভাবে একটি কূটনৈতিক এলাকায় পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সকল বিদেশি কূটনীতিক আবাসকে গুলশানে স্থানান্তরিত করা হবে বলে জানানো হয়।

Untitled

বঙ্গবন্ধুকে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ

৬ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ডাকসু আজীবন সদস্যপদে বরণ করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এই উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খেলার মাঠে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে বরণ করার আয়োজন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। খবরে বলা হয়, এতে শিক্ষক-ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী, গণপরিষদ সদস্য এবং অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত থাকবেন।

স্বল্পবিত্তদের জন্য বাড়ি: সহজ কিস্তিতে দেওয়ার পরিকল্পনা

স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য সরকার কম খরচে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে বলেও সংবাদপত্রের খবরে দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব বাড়ি নির্মিত হবে। বাড়িগুলো হবে বহুতলবিশিষ্ট ও ফ্ল্যাটভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি সহজ কিস্তিতে। পরিশোধযোগ্য মূল্যে একটি ফ্ল্যাট একটি পরিবারকে বরাদ্দ করা হবে। সরকারের এই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে পনেরো কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম ও খুলনায় এ ধরনের কয়েকটি ভবন নির্মিত হতে যাচ্ছে বলে খবরে জানানো হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০ হাজার পরিবারের বসবাস উপযোগী আরও বেশ কিছু বাড়ি তৈরি করা হবে। এতে প্রায় একশ’ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। এ ব্যাপারে সরকার বিদেশি সাহায্যের আশা করছে। এই পরিকল্পনায় সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়।