স্বাধীনতাবিরোধীরা সক্রিয়, রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুর সতর্ক বার্তা

ফিরে দেখা ১৯৭২চার দিনব্যাপী উত্তরবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবারও স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ ত্যাগ স্বীকার না করলে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম না করলে দেশকে গড়ে তোলা যাবে না।’ সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃঢ়-সংকল্প ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সোনার বাংলা হবে শোষণমুক্ত বাংলা। এখানকার মাঠে মাঠে সোনার ফসল, মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে হাসির ছটা।’

১৯৭২ সালের ৯ মে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় সেদিন ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা কাজ করুন কঠোর পরিশ্রম করুন। আমার সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্নকে আপনারা সফল করুন।’ বৈদেশিক সাহায্যের বিষয়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শর্তযুক্ত ঋণ নেবো না। ভবিষ্যৎ বংশধরদের দাসে পরিণত করার জন্য আমরা কোনও ধরনের শর্তযুক্ত ঋণ নিতে পারি না।’ বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনাদের ঐক্য আছে, আপনাদের প্রজ্ঞা আছে। মাত্র তিনটি বছর আপনারা কঠোর পরিশ্রম করুন। আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, তাহলেই দেশ আবারও সোনার বাংলা হয়ে উঠবে।’ জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক মূল্যের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু দেশের শত্রুরা এটাকে মেনে নিতে পারছে না। এই স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতেই তারা সক্রিয়। এর জন্য তারা বিপুল পরিমাণ টাকাও পাচ্ছে। এই ধরনের কিছু সংখ্যক দালালকে এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে। আরও কিছু এখনও বাইরে রয়ে গেছে। এরা অস্ত্র সমর্পণ করেনি। এরা মুক্তিবাহিনীর ভেক ধরেছে। কিন্তু আসলে তারা তা নয়। এরা ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে। নিয়োজিত রয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজে।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই গণবিরোধী ব্যক্তিদের শায়েস্তা করার জন্য দরকার হলে পুলিশকে অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এ ব্যাপারে জনগণ পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করবে—এটাই আমি চাই, বলে জানান বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘আপনারা লাঠি নিয়ে তৈরি হোন। দেশের  শত্রুদের নির্মূল করতে প্রয়োজন হলে আমি আবারও আপনাদের অস্ত্র দেবো। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের মূল্যে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা বৃথা যেতে দেবো না।’ কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের দুঃখ-কষ্টে আজ  তারা কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করছে। অথচ জীবনে কোনোদিন জনগণের কোনও কল্যাণ তারা করেনি। জনগণের কল্যাণ করার কাজে এদের কেউ বাধা দেয়নি। এরা মুক্তিযুদ্ধের সময় লুকিয়ে ছিল। কিন্তু আজ  মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে।’ এই ধরনের লোকদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা একটি গ্রাম বেছে নিচ্ছেন না কেন? সেই গ্রামের নিরুপায় মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন না কেন? অন্তত এটুকু করে আপনারা জনগণের কিছু কল্যাণ করতে পারেন।’

এদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আপনারা যদি স্বাধীনতা বানচালের চেষ্টা করেন, কিংবা দরিদ্র জনতাকে এ কাজে ব্যবহার করতে চান, তাহলে আমি আপনাদের প্রতি দয়ার সাগর সাজবো না।’ প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘দেশে একটি লোককেও না খেয়ে মরতে দেওয়া হবে না। বন্ধু ভাবাপন্ন দেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য এসে পৌঁছেছে এবং আরও খাদ্যশস্য আসছে।’ চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন যে, ‘যদি সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ না করে, তাহলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Untitledএর আগে রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়। উত্তরবঙ্গে চার দিনব্যাপী সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজশাহীতে বিপুল সংবর্ধনা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ ছিলেন। সার্কিট হাউজ ময়দানে হাজার হাজার জনতা বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে।