যে নামেই বলা হোক না কেন আমি চার নীতিতে বিশ্বাসী: বঙ্গবন্ধু

1‘জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি মৌলিক নীতির প্রতি আস্থাশীল’—বলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন । ১৯৭২ সালের ২২ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তার সরকারি বাসভবনে ছাত্রদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলোচনায় এ কথা বলেন।তিনি বলেন, মুজিববাদ বা অন্য যে কোনও নামে অভিহিত করা হোক না কেন আমার কিছু বলার নেই।আমি এই চার নীতিতে বিশ্বাসী।
এদিন ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী এবং আব্দুল কুদ্দুস মাখনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা স্লোগান দিয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সামনে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু ছাত্রদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে আলাপ করেন। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি মূলনীতি দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই চারটি মৌলিক নীতির ধারায় বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।

বঙ্গবন্ধু যখন কথা বলছিলেন ঠিক সেসময় ছাত্ররা ‘জয়মুজিব, এবারের বিপ্লব মুজিববাদের বিপ্লব’, ‘বিশ্বের নতুন বাদ মুজিববাদ মুজিববাদ’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি এই চার নীতি বিশ্বাস করি একে মুজিববাদ আখ্যা দেওয়া হোক বা অন্য যে কোনও নাম দেওয়া হোক না কেন তাতে বলার কিছু নেই।

2

এসময় সকল ষড়যন্ত্র উৎখাত করে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন নূরে আলম সিদ্দিকী।গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ডাকসুর বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন বলেন, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং মুজিববাদের চারটি মৌলনীতির ভিত্তিতে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের মাওলানা ভাসানীর অনুচর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।

3

১৯৭২ সালের ২২ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আকস্মিকভাবে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট পরিদর্শন করেন। সচিবালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন তিনি। তেমনিই একটি ছবি দৈনিক বাংলা পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়।

এদিকে, অর্থ ও পরিকল্পনা দপ্তরের মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ উৎপাদনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশে জনশক্তি পূর্ণ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দেশের জনশক্তি পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলেই আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা অগ্রগতি আসবে। পরিবর্তন সম্পর্কিত এক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তাজউদ্দিন আহমেদ দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে গড়ে তোলার জন্য জনগণকে কঠোর পরিশ্রম করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক বিরাট জনশক্তির অধিকারী। এই জনশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের দেশ প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে উত্তরোত্তর এগিয়ে যেতে পারবে।

4

চক্রান্তকারী স্ক্রিনিং কমিটি গঠনের আহ্বান

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মচারীর তীব্র সমালোচনা করেন। এক বিবৃতিতে তিনি সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে চক্রান্তে লিপ্ত  কর্মচারীদের অতীত ও বর্তমান তৎপরতা পর্যালোচনার জন্য অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে স্বাধীনতার পরও কিছু সরকারি কর্মচারী তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারেননি। তাদের কার্যকলাপ ও আচরণ বিপ্লবী সরকারের আদর্শ ও নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সরকারি কর্মচারীরা চাতুর্যের সঙ্গে তাদের আমলাতান্ত্রিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন। পাকিস্তানি আমলের আচরণেই নিজেদের অভ্যস্ত করে তুলেছেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ এ নাশকতা তৎপরতাকে সহ্য করবে না। যারা সরকারি নীতি ও চারটি রাষ্ট্রীয় মন্তব্য বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তিনি তাদের কঠোর নিন্দা করে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্তের জন্য স্ক্রিনিং কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।