মিছিল নিয়ে বাস্তুহারারা বঙ্গভবনে, বঙ্গবন্ধুর আশ্বাস

মুজিববর্ষ (২৭ মে প্রকাশিত দৈনিক বাংলার শিরোনাম)

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৬ মে’র ঘটনা।)

চরাঞ্চলে বাসস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে বাস্তুহারাদের আশ্বাস জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের  ২৬ মে বাস্তুহারারা মিছিল করে বঙ্গভবনের সামনে আসে। বঙ্গবন্ধু এসময় বেরিয়ে আসেন এবং তাদের আশ্বস্ত করে বক্তৃতা দেন।

তিনি বলেন যে ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় তাদের যত্রতত্র অননুমোদিত বাড়িঘর নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। চরাঞ্চলে তাদের জন্য ব্যবস্থা হচ্ছে। বাসসের খবরে প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু গণভবনের সম্মুখে বাস্তুহারাদের সামনে বক্তৃতায় বলেন, বিনা অনুমতিতে বাড়িঘর নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। বাস্তুহারাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি। গ্রামে ফিরে যেতে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে তাদের পুনর্বাসনের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। এলাকায় বসতি স্থাপনের কথা উল্লেখ করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করতে সমবেত জনতার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তা আপনারা কাজে লাগান। বঙ্গবন্ধু এ বক্তৃতায় তাদের সতর্ক করে বলেন যে এক শ্রেণির লোক অরাজকতা সৃষ্টির জন্য গ্রামে গ্রামে গুজব ছড়াচ্ছে যে শহরে গেলেই বাসস্থানের সুযোগ পাওয়া যাবে। িএসব গুজবে তাদের কান না দেওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।

 চাল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে মজুতদাররা

৭২ সালের এই সময়টি ধান-চালের মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে যায়। মজুতদাররা সেসময়েও কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তথ্যভিত্তিক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক বাংলা। দৈনিকটির মূল প্রতিবেদন ছিল এটি। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণ ধান চাল মজুত আছে। এসব খাদ্যশস্য একস্থান হতে অন্য স্থানে স্বাভাবিকভাবে আনা নেওয়ার ব্যবস্থা হলে চালের দাম দ্রুত হ্রাস পাবে। শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার চেষ্টা সত্ত্বেও মজুতদার ও গুজব রটনাকারীদের কারণে যে চালের দাম সহনশীল করতে পারছে না তার ইঙ্গিত রয়েছে এ প্রতিবেদনে। 

পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, একেকজন মজুতদার বর্তমানে বিপুল পরিমাণে ধান-চাল গুদামজাত করছে। প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিণপন্থী, বামপন্থী ও দালালরা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের যে কাল্পনিক চিত্র জনসাধারণের সামনে তুলে ধরছেন এবং নানারকম গুজব রটাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে মজুতদাররা খাদ্যশস্য গুদামজাত করছে। ঢাকা শহর ও আশপাশে বর্তমানে বিভিন্ন খোলাবাজারে বিক্রির জন্য গুদামে ১০ হাজার মণ চাল মজুত আছে। তারপরও এসব শহরে চালের দাম কমছে না। জানা গেছে, বর্তমানে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় চাল আসতে দেওয়া হচ্ছে না। একশ্রেণির লোক দেখামাত্র সেসব (চাল ভর্তি) বাহন আটক করে। ফলে পটুয়াখালীর এক অঞ্চল হতে অন্য অঞ্চলে চাল নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যানবাহনের অভাবে দিনাজপুর নওগাঁ হতে চাল আনানো সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে বাংলাদেশকে অবিলম্বে ১০ লাখ টন খাদ্যশস্য সাহায্য দানের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে জরুরি বার্তা পাঠান বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী। জাতিসংঘের কাছে এক জরুরি বার্তায় দ্রুত আরও খাদ্যশস্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানানো হয়। এর আগে জাতিসংঘের কর্মকর্তা মি. আমব্রিখেট এর মাধ্যমে বাণিজ্যমন্ত্রীর জরুরি বার্তা পাঠানোর বৈঠকে খাদ্য সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।  বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান। জবাবে বাংলাদেশের যে খাদ্য সংকট চলছে তা মোকাবিলার জন্য তিনি বাংলাদেশের দুর্গত এলাকাসমূহে খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের পরিকল্পনার কথা জানান আমব্রিখেট।