প্রধান তিন রাজনৈতিক দল নিয়ে জাতীয় কমিটি

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৯ মের ঘটনা।)Untitled

দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের যে জরুরি সমস্যা বিরাজ করছে, তা মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি মোজাফফর গ্রুপ ও  বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি— ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিন পার্টির একটি জাতীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭২ সালের ২৯ মে (সোমবার) রাতে এ তথ্য জানা যায়। সংবাদ সংস্থা এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয়, তিন পার্টির জাতীয় কমিটি গঠনের সঠিক তারিখ নির্ধারণ না হলেও ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির ঘনিষ্ঠ  সূত্রে বলা হয়, শিগগিরই সব পর্যায়ে কমিটি গঠিত হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ২৯ মে বিকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান কমরেড মনি সিং ও জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুস সালাম এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রায় ৯০ মিনিট বৈঠক হয়। বাংলাদেশ বর্তমানে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, তার সমাধানের জন্য নিজেদের মধ্যে সার্বিক সহযোগিতার সম্ভাবনা সম্পর্কে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা আলোচনা করেন। সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে অধ্যাপক মোজাফফর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সব স্তরে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রিসভা ছাড়া সব স্তরে আমরা সরকারকে সমর্থন দেবো।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণ জানালে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি তাতে যোগদান করবে কিনা, জিজ্ঞাসা করা হলে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘এ বিষয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি।’

১৯৭২ সালের ৩০ মে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, পরে টেলিফোনে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ জানান, দুর্নীতিবাজ, চোরাচালানি, মজুতদারি, কালোবাজারি, মুনাফাখোর, কায়েমী স্বার্থবাদীদের অপরাপর গণবিরোধী তৎপরতায় সৃষ্ট সমস্যাগুলোর মোকাবিলায় তিনটি রাজনৈতিক দল মন্ত্রিসভা পর্যায়ে সরকারকে সহযোগিতা করবে।ন্টপাঙড়গহ

গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটাতে দেওয়া হবে না

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি কোরবান আলী, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আজ  যারা জনগণ সমর্থিত ও জনগণের নির্বাচিত পরিষদের ক্ষমতা বিলুপ্ত করে বিকল্প পন্থায় একনায়কত্বের সৃষ্টি করতে চান, তারা গণতন্ত্রের সমর্থক হতে পারেন না।’ এদের সম্পর্কে তারা আরও বলেন, ‘এরা শুধু যে বাংলার মাটিতে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটাতে চান তা নয়, তারা এর দ্বারা চার স্তম্ভ এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অনাস্থা ও অবিশ্বাস জমিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চান।’ এক  যুক্ত বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘দেশের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে বঙ্গবন্ধু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যে শাসনতন্ত্রে বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে।’ তারা আরও জানান যে, গণপরিষদ নিযুক্ত খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই শাসনতন্ত্র রচনার কাজ প্রায় সমাপ্ত করে এনেছে। দেশ যখন সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিক পন্থায় একটি সফল শাসনতন্ত্র পাওয়ার পথে অগ্রসরমাণ, ঠিক সেই মুহূর্তে প্রস্তাবিত শ্বসনতন্ত্রের রূপরেখা ও কাঠামোর সঙ্গে পরিচিত না হয়ে, যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত, তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে দেশবাসীর সম্যক অবহিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।১১১১

মন্ত্রিসভাকে বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নিতে হবে

জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, গণপরিষদ সদস্য আব্দুল মান্নান এদিন (২৯ মে) এক সাংবাদ সম্মেলনে নিম্নলিখিত বক্তব্য পেশ করেন।

জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক  আব্দুল মান্নান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিনের যে যুক্তবিবৃতি ২৬ ও ২৭ মে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, তার কিছু অংশের ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তিনি এই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের কোনও প্রস্তাব করিনি। বঙ্গবন্ধু ও তার বর্তমান মন্ত্রিসভা সম্পর্কে আমাদের বিবৃতিকে অপব্যাখ্যা করে কোনও কোনও মহল থেকে বিকৃত রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারকে জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে বিপ্লবাত্মক কর্মসূচি প্রণয়ন ও কঠোর হাতে তা কার্যকর করার কথা বলেছি।’