অবশেষে স্বাধীন বাংলায় পাট নিয়ে সরকারি নীতি ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, চাষিদের স্বার্থে পাটের ন্যায্যমূল্য বেঁধে দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু থেকেই বড় শিল্প জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে নানা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে আসছিলেন। এ নিয়ে বেশ সমালোচনা হলেও তিনি জাতীয়করণকে জরুরি মনে করে পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন। পাটের ক্ষেত্রেও সেটি কার্যকর করার কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ সরকার পাটের রফতানি বাণিজ্য জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ১৯৭২ সালের ৩১ মে’র সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পহেলা জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী নারায়ণগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এসব সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী বলেন, ‘শিগগিরই পাট রফতানি করপোরেশন গঠন করা হবে। এই করপোরেশনের মাধ্যমে বিদেশে পাট রফতানি করা হবে। করপোরেশনে থাকবেন একজন সার্বক্ষণিক চেয়ারম্যান ও তিন জন পরিচালক।’ করপোরেশনের কার্যাবলী ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রফতানি বাণিজ্যের যাবতীয় লেনদেন করবে রফতানি করপোরেশন।’
এম আর সিদ্দিকী বলেন, ‘করপোরেশনের নামে এজেন্টরা বিদেশে রফতানি করবেন। রফতানি পণ্যে করপোরেশনের মার্কা থাকবে এবং রফতানি সংক্রান্ত ব্যাপারে বিদেশি ক্রেতাদের কোনও ন্যায়সঙ্গত দাবি উঠলে তার দায়িত্ব বর্তাবে করপোরেশনের ওপর। পরে অবশ্য করপোরেশনের কাছে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে তার জন্য দায়ী হতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার পাট চাষিদের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখবে। পাটের ন্যায্য মূল্য বেঁধে দেওয়া হবে এবং পাট চাষিরা যেন ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন তার কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গাতে ক্রয়কেন্দ্র থেকে সরকারি সংস্থাগুলো পাট থেকে কিনবে। এতে চাষিরা সরাসরি এদের কাছে পাট বিক্রয় করে ন্যায্যমূল্য পেতে পারবেন। এছাড়া, একর প্রতি পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করে সরকার চাষিদের খরচ কমানোর সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জাতীয়করণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণকে ব্যবসা জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটি সার্বিকভাবে জাতীয়করণের পথে প্রথম পদক্ষেপ।’
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সির সহকারী প্রশাসক ম্যাকডোনাল্ড ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৯ কোটি ডলার অর্থাৎ ৬৬ কোটি টাকা সাহায্যের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পাদিত প্রথম চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের সেক্রেটারি গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষর করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মসূচির মাধ্যমে আরও ৭৭ কোটি ডলার মূল্যের খাদ্যশস্য সরবরাহ করছে।’ তিনি আরও তথ্য প্রকাশ করেন যে, আরও অতিরিক্ত চার কোটি ডলার মঞ্জুরি সম্পর্কে মার্কিন সাহায্য কর্মসূচি ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে।