বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন: প্রত্যেক নাগরিক হবেন নিঃস্বার্থ ও নিষ্ঠাবান

ফিরে দেখা ১৯৭২(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২০ জুনের ঘটনা।)

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে প্রতিটি নাগরিক হবেন নিঃস্বার্থ ও নিষ্ঠাবান। ১৯৭২ সালের ২০ জুন সন্ধ্যায় বাংলাদেশে সফররত আন্তর্জাতিক সমাজকল্যাণ সংস্থার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এস ডি গোখলে গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একের পর এক বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকারে এগিয়ে আসছেন দেখে প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, মাতৃভূমির মুক্তি তাঁর জীবনের বড় স্বপ্ন ছিল এবং তা সফল হওয়ায় তিনি আনন্দিত। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনগণের মৌলিক প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখেই সব পরিকল্পনা প্রণীত হচ্ছে। এই প্রচেষ্টা যদি কেবল নিষ্ঠার অভাবে ব্যর্থ হয়, তবে সমাজ জীবনে নেমে আসবে দুর্ভোগ।’ তিনি বলেন, ‘একই কারণে পাশ্চাত্যের বহু উন্নত দেশ নানা রূপ সামাজিক ব্যাধিতে ভুগছে।’ এদিকে গোখলে বঙ্গবন্ধুকে বলেন, ‘সমগ্র এশিয়া আপনার নেতৃত্বের প্রতীক্ষায়। উন্নত দেশগুলো বিশেষ করে এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো আপনার নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে।’ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং যে পথে তিনি তাঁর দেশের সমস্যার সমাধান করছেন, তা দারিদ্র্য ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনার মহতি উদ্যোগকে অনুপ্রাণিত করবে বলেও গোখলে উল্লেখ করেন।

১৯৭২ সালের ২০ জুনের দৈনিক পূর্বদেশবঙ্গবন্ধুর শুভ কামনা

জুনের শেষে সিমলায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জন্য শুভ কামনা জানান। প্রধানমন্ত্রী রয়টার্সের সংবাদদাতা জিরাল্ড রাপৎসিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে সরাসরি কোনও মন্তব্য প্রকাশ করতে অপারগতা জানান এবং এটা তাদের নিজেদের ব্যাপার ও তাদেরকেই কথা বলতে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে তাদের সাফল্য কামনা করেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার বাতিল করার কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এটা আপনি কেমন করে আশা করেন? ৩০ লাখ নিরীহ লোককে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে এবং এক কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আর দেড় কোটি মানুষ প্রাণের ভয়ে স্থান হতে স্থানান্তরে পালিয়ে বেড়িয়েছে। সুতরাং, কী ঘটেছে তা বিশ্ববাসীর জানা উচিত।’ তিনি বলেন যে, ‘পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের ভারত থেকে কারও হাতে তুলে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, তারা প্রথমে বাংলাদেশ বাহিনীর কমান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।’

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ভুট্টোর বোধোদয়

বিদেশ ঘুরে এসে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর চৈতন্য হয়েছে বলে ২০ জুনের দৈনিক পূর্বদেশে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলে পাকিস্তান একঘরে হয়ে পড়বে বলে তিনি (ভুট্টো) বুঝতে শুরু করেছেন। সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে ভুট্টো বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে, তা না-হলে পাকিস্তান একঘরে হয়ে যাবে।’ ওই বৈঠকে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বরে (১৯৭২) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করবে বলে তিনি নিশ্চিত। সুতরাং, তিনি চান না যে, জাতিসংঘে পাকিস্তান একঘরে হয়ে থাকুক।’

দৈনিক পূর্বদেশ, ২০ জুন ১৯৭২ঢাকা শহর ছাত্রলীগের শপথ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের সব প্রকার ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ— এক কথায় মুজিববাদ বাংলার মাটিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মীবাহিনী নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে বলে শপথ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা শহর শাখার কার্যকরী কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে ছাত্রলীগ ঘোষিত আগামী ২২ জুন থেকে দেশব্যাপী ‘সামাজিক শত্রু দমন পক্ষের’ কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করা হয় এবং কর্মসূচিকে সফল করে তোলার জন্য কর্মীবাহিনীর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।