সমাজবিরোধী মুনাফাখোর ও চোরাকারবারিদের খুঁজে বের করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত চলমান অভিযানের চতুর্থ দিন ১৯৭২ সালের ২৫ জুন ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছিল। ধানমন্ডি এলাকায় ৮ ঘণ্টাব্যাপী কারফিউ জারি করে পুলিশ বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সমাজবিরোধী ২৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রসহ চোরাই গাড়ি উদ্ধার করে। চলমান এই অভিযানে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা। স্বাধীনতার পর এদিন ঢাকায় প্রথম কারফিউ জারি করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজবিরোধী মুনাফাখোর চোরাকারবারিদের সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছিলেন ৭ জুনের জনসভা থেকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি এলাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রক্ষী বাহিনী এই অভিযানে পুলিশকে সাহায্য করে। পুলিশ সূত্রে বলা হয়, গত কালকের (২৫ জুন) এই তল্লাশিতে ২৫টি চোরাই মোটরকার উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, ২৩৭টি মোটরসাইকেল, একটি অটোরিকশা, পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ থ্রি নট থ্রি রাইফেল, ৫০ রাউন্ড গুলিসহ একটি রাইফেল, অসংখ্য কার্তুজ, বিভিন্ন ধরনের গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে এই দিনের বাসসের খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে এই মর্মে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানকারীদের দেখা মাত্রই গুলি করা হবে— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মান্নান এ কথা বলেন। এদিন টাঙ্গাইল থেকে কয়েক মাইল দূরে বানিয়ারা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘গুলি বর্ষণের ফলে দুই দেশের চোরাচালানকারী কোনও ব্যক্তি যদি নিহত হয়, তাহলে কোনও সরকারই দুঃখ প্রকাশ করবে না।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে আটক থাকা বাঙালিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত আমরা কেউ স্বস্তিতে বসবাস করতে পারছি না। স্বাধীনতার পূর্ণতা লাভ করেছে, তা ভাবতে পারছি না।’ সে সময়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের ফিরিয়ে আনতে যতগুলো কৌশলী উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সবগুলোই আশান্বিত করে তুলেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের হিংস্রতা ও বর্বরতায় দুঃখ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এসব ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডকে পশুত্বের সঙ্গেও তুলনা করা যাবে না।’ বাঙালিদের ফিরিয়ে দিতে নানা অধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের আর্জির নিউজ প্রতিদিনই প্রকাশিত হতো। ঢাকা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী আলীম আল রাজী বলেন, ‘পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ভাগ্য বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’ বেসামরিক জনসমষ্টিকে কখনও আটকে রাখা যায় না বলে অভিমত প্রকাশ করে তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘সিমলা বৈঠকের আগেই আটকে পড়া বাঙালিদের স্বদেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়া হোক।’
যে সব বীর সেনানী স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, ওই সম্মেলনে তাদের রুহের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ধর্মের নামে কাউকে শোষণ করতে দেবে না এবং এদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনও স্থান নেই।’