বঙ্গবন্ধু সফর শেষ করে ফিরছিলেন কুষ্টিয়া থেকে। খুলনায় ছোট ভাই শেখ নাসেরের বাড়িতে অসুস্থ মা। হুট করেই জরুরি ভিত্তিতে তিনি খুলনায় নেমে মায়ের সঙ্গে দেখা করে ঢাকায় ফেরেন।
পরের দিনের সবকয়টি পত্রিকায় সেই মর্মস্পর্শী খবর প্রকাশিত হয়। অসুস্থ বৃদ্ধ মায়ের বুকে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রকাশ করে দৈনিক ইত্তেফাক। খবরে বলা হয়, তাকে এক নজর দেখার জন্য বঙ্গবন্ধু কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা ফেরার পথে এক অনির্ধারিত সফরে এক ঘণ্টার জন্য অবতরণ করেন। তার ছোট ভাই শেখ নাসেরের বাসায় অবস্থানরত মায়ের শয্যাপাশে যখন বঙ্গবন্ধু হাজির হন তখন এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের অবতরণ হয়। ছোট শিশুর মতো বঙ্গবন্ধু মাকে জড়িয়ে ধরেন।
বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতিসংঘ সদস্যপদ প্রাপ্তিতে সমর্থন করবে বলে জানান নিক্সনের ব্যক্তিগত দূত কোনালী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি এই কথা বলেন। আলোচনার পর সামাদ জানান, মিস্টার কোনালী আরও বলেছেন যে, আটক প্রায় পাঁচ লাখ বাঙালিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। কোনালী সফরকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দুই ঘণ্টা আলোচনা করেন। ৩ জুলাই সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। তাদের মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর কক্ষ থেকে বাইরে এসে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কোনালী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনা খোলাখুলি ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
এদিকে কুষ্টিয়া থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই দিনের জন্য কুমিল্লা সফরে যাচ্ছেন। বাসসের খবরে বলা হয়, কুমিল্লায় তিন দিন অবস্থানকালে তিনি অভয় আশ্রম ময়দানে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সিমলা শীর্ষ বৈঠকে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক পাকিস্তান ও ভারত আর কখনো পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ না করার সংকল্প গ্রহণ করে। পাঁচ দিনব্যাপী শীর্ষ বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। এর আগে একাধিক বৈঠকের পরেও কোনও পরিণত সিদ্ধান্তের দিকে না যেতে পারায় একপর্যায়ে বৈঠক সিদ্ধান্তহীন শেষ হয় কিনা সেই শঙ্কা দেখা দিতে থাকে। অবশেষে নৈশভোজ শেষে ভুট্টো যেই ভবনে অবস্থান করছিলেন সেই ভবনে মধ্যরাত্রির একটু পরে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে বলা হয়, তৃতীয় কোনও পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া উভয় দেশ নিজেদের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করবে। চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশই স্ব-স্ব সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর অপসারণ করবে। তবে কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বরের যুদ্ধ বিরতি রেখা অক্ষুন্ন থাকবে। এই ক্ষেত্রে পারস্পরিক মতভেদ সত্ত্বেও কোনও পক্ষই শক্তিবলে যুদ্ধবিরতি রেখা পরিবর্তনের চেষ্টা করবে না।