রাষ্ট্রের সার্বিক ক্ষমতার অধিকারী জনগণ: সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধু

দৈনিক বাংলা, ৬ জুলাই(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ৫ জুলাইয়ের ঘটনা।)

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রের সার্বিক ক্ষমতার অধিকারী হলো জনগণ।’ ১৯৭২ সালের ৫ জুলাই কুমিল্লা সেনানিবাসে জওয়ানদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মহান বীর সৈনিকদের প্রতি তার আস্থার কথা জানান।

এই সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সৈনিকরা দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় চরম আত্মত্যাগের জন্য সদা প্রস্তুত থাকবেন। স্বাধীনতা নস্যাতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার জন্য তিনি জওয়ানদের প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বাহিনীকে জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানান এবং সশস্ত্র বাহিনী জনগণের সঙ্গে থেকেই স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদ-সমাজতন্ত্র-গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি আস্থা রেখে সৈনিকরা জনগণের সেবার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’

ময়নামতি সেনানিবাসের ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজে এই ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার এই ধরনের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এটিই প্রথম ছিল।

ইত্তেফাকের প্রধান ছবিতে ৪ জুলাইয়ের জনসভার ছবিবাংলাদেশের স্বাধীনতা আর কেউ বানচাল করতে পারবে না এবং টিকে থাকার জন্যই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে বলেও তিনি ভাষণে উল্লেখ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সেনাবাহিনী জাতির প্রতি ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের যে মহান ঐতিহ্য স্থাপন করেছে তা থেকে তারা বিচ্যুত হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু। এই সময় জওয়ানরা হাততালি দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ, জয় বাংলা স্লোগান’ দিতে থাকেন।

বঙ্গবন্ধু সৈনিকদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া সারাবিশ্বে কোনও জাতি তাদের মহত্ব অর্জন করতে পারেনি। বিশেষ করে সেনাবাহিনীতে নিয়মানুবর্তিতা একান্তভাবে প্রয়োজন। নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া জাতির ঐক্য সংহতি বিপন্ন হতে পারে। সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, মুক্তিবাহিনী, পুলিশ ও জনগণের অবদান আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’

সেনাবাহিনীর সাজ-সরঞ্জাম ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা আশানুরূপ নয়, এই কথা স্বীকার করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বর্তমান মুহূর্তে এছাড়া কোনও উপায় নেই। কারণ দেশের আর্থিক সঙ্গতি বর্তমানে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন। স্মরণ রাখতে হবে যে যেখান থেকে তারা এসেছে, সেই গ্রামে তাদের পিতা-মাতা রয়েছেন। তারা সেখানে এক দুঃসহ অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। প্রথমে তাদের অবস্থার প্রতিকার করতে হবে।’ এই সময় প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড হাততালির মধ্যে চারটি রাষ্ট্রনীতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।

দৈনিক বাংলার সংবাদ ও ছবি
তারা কি সত্যিই মানুষ- প্রশ্ন বঙ্গবন্ধু

তারা কেমন করে এই রকম করতে পারলো? তারা কি সত্যিই মানুষ নাকি পশু? বাকরুদ্ধ কণ্ঠে আপন মনে প্রশ্নগুলো আওড়ান বঙ্গবন্ধু। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল পরিদর্শনকালে তিনি এই প্রশ্ন করেন নিজেকে। সেখানে ৯ সৈনিকের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন যাদের হানাদাররা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল সেসব দেখে বঙ্গবন্ধু বিস্মিত হন। আবার তিনি আপন মনে বলতে থাকেন, পাকিস্তানিদের মতো এত নির্মম আর হৃদয়হীন কেউ হতে পারে না, হতে পারবে না। দু’দিনের কুমিল্লা সফরে বঙ্গবন্ধু ৫ জুলাই সেখানকার শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবকও অর্পণ করেন। অপরিসীম শ্রদ্ধায় তিনি নিজে নীরবে মোনাজাত করেন এবং শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।

মায়ের খবরের প্রতীক্ষায়
কুমিল্লা থেকে ঢাকা ফিরে বঙ্গবন্ধু তেজগাঁও বিমানবন্দরে প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করেন। মায়ের অসুস্থতার পরিস্থিতির খবর শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। খবরে বলা হয় খুলনায় তার মাকে দেখে বেগম মুজিব ফিরে না আসা পর্যন্ত বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে থাকেন বঙ্গবন্ধু। খুলনা থেকে ফিরে এলে মায়ের খবর শুনে তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।