ভুট্টোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথিত বৈঠকের খবর ভিত্তিহীন

1১৯৭২ সালের জুলাই মাসের কোনও এক সময়ে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে পাকিস্তানের কোনও কোনও পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ তা অস্বীকার করেন। ১৯৭২ সালের ৮ জুলাই পত্রিকার খবরে এসব তথ্য জানানো হয়। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই খবরকে ভিত্তিহীন এবং নিছক কল্পনা বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়ে পাকিস্তান যতদিন না বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, ততদিন তাদের সঙ্গে কোনও বৈঠকে বসা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়।
এর আগে কুমিল্লায় জনসভায় বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবন্দিদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে বলে জানিয়ে দেন। ভুট্টোর উল্টাপাল্টা কোনও বক্তব্যে বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বদরবারে বাস্তব সত্য। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেই কেবল কোনও আলোচনা হতে পারে।


শহীদুল্লা কায়সার হত্যা মামলার রায় ১৭ জুলাই
ঢাকার পঞ্চম স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের এজলাসে শহীদুল্লা কায়সার অপহরণ ও হত্যা মামলার শুনানি শেষ হয়। চাঞ্চল্যকর বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলাটির রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়। সরকারপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা মোতাবেক আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পড়ে শোনানো হয়। আসামি দাবি করেন তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণে তার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে।

৮জুলাই দৈনিক বাংলা
পাঁচসালা পরিকল্পনা চালুর সিদ্ধান্ত
উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাথমিক পর্যায়ে দরিদ্র জনগণের স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখে বিনিয়োগ ও উৎপাদন ব্যবস্থা করার ঘোষণা করেন তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২-৭৩ সালের উন্নয়ন বাজেট সম্পর্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি সমাজতন্ত্রে উত্তরণের এই সূচনাকালে অর্থনীতিতে দেশের জনগণের জন্য আবশ্যকীয় সম্পদ সৃষ্টিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সমাজতন্ত্রের অভীষ্ট লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে উপনীত হওয়ার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। অন্যথায় এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম তাদের সমূলে ভাসিয়ে নিতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার আওতায় জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সে উদ্দেশে পুনর্গঠন ও উন্নয়ন কর্মসূচি সফল করে তোলার জন্য পরিকল্পনায় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

ইত্তেফাকের ৮জুলাইয়ের ছবি ও সংবাদ
বঙ্গবন্ধু সুস্থ হয়ে উঠছেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সন্তোষজনকভাবে আরোগ্য লাভ করছেন বলে পত্রিকার খবরে বলা হয়। কুমিল্লা থেকে ফিরে এসে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুকে বিরক্ত না করার জন্য দর্শনার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানান। বাসসের পরিবেশিত খবরে বলা হয়, পরিদর্শন বইতে শুভেচ্ছা বাণী রেখে আসতে বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য এটা বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাসানী
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, শেখ মুজিব ও তার বিশ্বস্ত সৎ এবং অনুগত সহকর্মীদের প্রতি তার সবসময়ই গভীর আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশকে তিনি সত্যিকার বাংলা করতে পারবেন। ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই ভূমি সংস্কার ও রাজস্ব মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকায় ফেরার পথে তার সঙ্গে দেখা করেন সেরনিয়াবাত। সেসময় ভাসানী বলেন, বর্তমান সরকারকে উৎখাতের ইচ্ছা তার নেই, এরকম ইচ্ছার কোনও কারণ নেই। তবে অবিচার ও নিপীড়নের প্রতিবাদ তিনি সবসময়ই করবেন।ইত্তেফাক ৮ জুলাই ১৯৭২