একাত্তরের দালাল-ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

 

ফিরে দেখা ১৯৭২

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ  পড়ুন ওই বছরের ১১ জুলাইয়ের ঘটনা।)

বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ ডাকে সাড়া না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যারা ব্যবসায়ী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন, সেই সব দালাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে। গণপূর্ত ও নগর উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মতিউর রহমান আজ  (১১ জুলাই) একথা ঘোষণা করেন। চট্টগ্রামের একটি হোটেলে বিপণীবিতান ব্যবসায়ী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে দালালদের উৎখাত করা হবে। তাদের বৈদেশিক বাণিজ্য লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

দৈনিক বাংলা, ১২ জুলাই ১৯৭২বৃক্ষরোপণে বঙ্গবন্ধুর ডাক

বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের বনজ বৃক্ষ সম্পদ উন্নয়নের জন্য দেশব্যাপী ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ অভিযান পালিত হয়। অভিযান সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা একান্ত দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের গণপ্রতিনিধিত্ব ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক, সমাজসেবী, আপামর জনসাধারণের কাছে আবেদন করেছেন যে, তারা যেন নিজেদের এলাকার বৃক্ষরোপণ অভিযানকালে সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, ফ্যাক্টরি ইত্যাদির চারপাশে স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট ও বাড়ির আশেপাশে যেখানেই সম্ভব, ফুল-ফল ও মূল্যবান গাছ লাগিয়ে এ অভিযানকে সাফল্যমণ্ডিত করেন।

নেতাদের ওপর হামলার তদন্তে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

বঙ্গবন্ধু রাজশাহীতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের ওপরে হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দানের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের এ আশ্বাস জানিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ওসঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজশাহী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের হয়রানি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বঙ্গবন্ধু এসব ব্যাপারে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করবেন বলে তাদের আশ্বাস দেন।

দৈনিক বাংলা, ১২ জুলাই ১৯৭২ আদমশুমারি আদেশ জারি

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ১৯৭২ সালের ১১ জুলাই  আদমশুমারি নির্দেশ জারি করেন। ১৯৭২ সালের আদমশুমারি নির্দেশে সারা বাংলাদেশে আদমশুমারি পরিকল্পনা করা ও আদমশুমারি পরিচালনা করার জন্য একজন আদমশুমারি কমিশনার নিয়োগের বিধানও ছিল।

ভুট্টোর বিলাপ

পাকিস্তান অতীতের অপকর্মের জন্য প্রকাশ্যে অনুতাপ ও বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, বিপিআই-এর রাজনৈতিক সংবাদদাতা এই খবর প্রকাশ করে। পাকিস্তানি নেতারা অবশেষে বুঝতে পেরেছেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তারা আত্মঘাতী নীতি অনুসরণ করেছিলেন। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও নারী ধর্ষণের মাধ্যমে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার প্রতিবাদে সাবেক পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশের সৃষ্টি হয়েছে।

দৈনিক ইত্তেফাক ১২ জুলাই ১৯৭২১৮ দিনে  ৫০০ সমাজবিরোধী গ্রেফতার

১৮ দিনে প্রায় ৫০০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের তথ্য বলছে, গত জুন মাসের ২৩ তারিখ দেশব্যাপী দুষ্কৃতিকারী ও সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি অস্ত্রশস্ত্র ও এক লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং পুলিশ দফতর থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ১৮ দিনে ডাকাতি ও চুরি ছিনতাই, বেআইনিভাবে বাড়ি দখল ও অন্যান্য সমাজবিরোধী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অভিযোগে চার হাজার ৯০০ জনকে আটক করা হয়েছে। সরকারি সূত্রে আভাস দেওয়া হয়েছে যে. এই নির্মূল অভিযানের সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতিকারী ও সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতা আরও  জোরদার করেছে।