তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চান, আমিও তাই চাই। কিন্তু যেসব সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধে নিহত হয়েছেন, কে তাদের মেরেছে? কে তাদের নামের তালিকা দিয়েছে? আমি জানি যারা নামের তালিকা দিয়েছে তারাও সাংবাদিক।’ তিনি বলেন, কোনও এক দৈনিক পত্রিকার একজন সহকারী সম্পাদক ছিলেন আলবদর বাহিনীর নেতা। আরেকজন আছেন যিনি অধিকৃত আমলের মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টে খাবার সরবরাহ করতেন। সব সাংবাদিকের ফেরেশতা নন।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের নজির দিতে কেউ পারবে না
সরকার ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তার সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে এমন নজির কেউ দিতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, সরকার চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করছে। কয়েকটি নীতিমালা মেনে চলতে হবে। গণতন্ত্র মানে এই নয় রাতে হাইজ্যাক করা গাড়ি করে ঘুরবো আর দিনে বিপ্লব করব।
স্বাধীন বাংলার মাটিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা উদ্বোধন করতে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন সেই সাংবাদিকদের কথা যারা পাক বাহিনীর হাতে আত্মাহুতি দিয়েছেন। রাজনৈতিক সহযোগী শহীদুল্লা কায়সার সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন কারাগারে একসঙ্গে কাটিয়েছি। অবশ্য তিনি অন্য সেলে ছিলেন। অন্যদিকে সিরাজুদ্দীন হোসেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, তার সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হতো। তিনি বলেন, আমরা এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। এই স্বাধীনতার জন্য আমাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে। বর্তমান সরকারকে শূন্য হাতে কাজ শুরু করতে হয়েছে। জাতীয় সরকার গঠন করা যায় এমন কোনও কাঠামো ছিল না। ঘরে ঘরে অস্ত্র ছিল। মুক্তিবাহিনীর ছাড়াও আরও অনেকের কাছে অস্ত্র ছিল। স্বাধীনতার পর যাতে সরকারকে বিপদগ্রস্ত করা যায় তার জন্য হানাদার বাহিনী এদেশে অনেকের কাছে অস্ত্র দিয়ে যায়। আমাকে সেসব অস্ত্র উদ্ধার করতে হচ্ছে।
কিছু সংবাদপত্র সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে
বঙ্গবন্ধু কয়েকটি পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, এসব কাগজ যা মনে আসে তাই লিখে। তিনি কয়েকটি পত্রিকার সংবাদ শিরোনাম সাংবাদিকদের পড়ে শোনান। যেমন ‘এক লাখ বামপন্থীকে হত্যা’, ‘বিমান বাহিনীতে বিদ্রোহ, গণহত্যা চলছেই’। তিনি বলেন, সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও স্বাধীনতার পর এদেশে কোথাও গণহত্যা হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছে কিন্তু কয়েকটি পত্রিকা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দিয়ে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিন বছর কিছু পাবেন না
সাংবাদিকদের যেকোনও ন্যায্য দাবি সরকার মেনে নেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিন বছরের মধ্যে অন্যান্যদের মত সাংবাদিকরাও কিছু পাবেন না। সাংবাদিকরা তাদের কর্তব্য পালনের নীতিমালা ও তাদের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করছেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বৃক্ষরোপণ পক্ষ শুরু
দেশসেবার মহান আদর্শ নিয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযানের শরিক হওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিটি নাগরিককে আহ্বান জানান। ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুটি গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ পক্ষের উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, শুধু এই একটি পক্ষ পালন করেই দায়িত্ব শেষ হবে না। এই পক্ষ শেষ হবার পরও আমরা যেন গাছ লাগানোর উদ্যোগ থেকে বিরত না হই।
রাস্তা নির্মাণকারীই রাস্তার পাশে গাছ লাগাবেন
বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের সোনার মাটিতে অনায়াসে গাছ বড় করে তোলা যায়। বিশেষ কোনও বিভাগ নয় দেশ সেবার কাজ হিসেবে সবাইকে গাছ লাগানোর দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব যাদের রাস্তার ধারে গাছ লাগানোর দায়িত্বও তাদের। এ ব্যাপারে মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। বেশি করে ফল গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলার সাধারণ মানুষ মৌসুমের একটি বিশেষ সময় ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। তিনি বলেন একদিন এদেশ থেকে নারকেল সুপারি বিদেশে রপ্তানি হতো এখন এসব আমদানি করতে হয়। দেশবাসীর কাছে গাছ চেয়ে যে আবেদন করেছেন, সে আবেদনে কম বয়সীরাই বেশি সাড়া দিয়েছে বলেও জানান বঙ্গবন্ধু।