আলোচনায় অংশ নিয়ে সূচনা বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘করোনা মহামারিতে সারাদেশের মানুষ একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত। এরই মাঝে দেশে বন্যার ভয়বহতা বেড়েছে। বন্যার ভয়বহতায় যাতে কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সোমবার (২০ জুলাই) আমরা বন্যায় আক্রান্ত প্রায় ৩৩টি জেলার কৃষিবিষয়ক কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করেছি, দিক নির্দেশনা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার সংকটে জাতির উদ্দেশ্যে যতগুলো ভাষণ দিয়েছেন, ভিডিও কনফারেন্স করেছেন, প্রতিটি জায়গায় তিনি কৃষিকে স্বাস্থ্যের পরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এক ইঞ্চি জমি ও খালি রাখা যাবে না। যে পরিস্থিতি, যে ভয়াবহতা— এখন কোনোভাবেই খাদ্য সংকট রাখা যাবে না।” আমরা এটা বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তিনি আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে এই নির্দেশনার আলোকে কাজ করার নির্দেশ দেন।’
প্রফেসর এমিরেটাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, ‘এত কিছুর মধ্যেও ভালো খবর হলো, আমাদের কৃষিতে উৎপাদন ব্যবস্থাতে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনটা হলো এক কোটি ৬৫ লাখ কৃষক পরিবার যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঙ্গিকে চাষাবাদ করতো, সেটা এখনও আক্ষরিক অর্থে আছে। কিন্তু কার্যত একটি ঘটনা ঘটে গেছে যে, ব্যক্তি পর্যায় থেকে একটি সার্ভিস প্রোভাইডার বা মার্কেট-লেড উৎপাদন ব্যবস্থা কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এসেছে; যা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এটা বাণিজ্যিক কৃষির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, ‘১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বাধীন সরকার কৃষির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। সেই থেকে কৃষি গতি পেয়েছে এবং দুর্বার গতিতে এগিয়ে গিয়েছে।’
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ‘মৎসের ব্যাপারে প্রথমত দেখি এই যে, কোভিড-১৯ সারাবিশ্বকে যেটাকে আক্রান্ত করেছে বাংলাদেশও সেটি থেকে বাদ পড়েনি। এটার কিন্তু একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মৎস্য খাতে। করোনার কারণে সাপ্লাই চেইনটা ঠিক না থাকায় বিচরণ ক্ষেত্র ও প্রজনন কেন্দ্র বা হ্যাচারি থেকে মাছগুলো তুলে আনা যায়নি। সেক্ষেত্রে মৎস্য প্রজননটা বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে যদি উন্মুক্ত জলাশয়ের কথা বলা হয়, সেখানে কিন্তু শিল্পকারখানা বন্ধ থাকা এবং বেপরোয়াভাবে মাছ ধরে বন্ধ থাকায় মাছ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, ‘কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় এসেছে এক ব্যাপক পরিবর্তন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। এখন আমরা খাদ্য উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ণই নই, বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। আমি আরও বলি, বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম, মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পাট উৎপাদনে তৃতীয়, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজী উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম, আম উৎপাদনে সপ্তম। সরকারের ধারবাহিকতা আছে বলেই খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।'
ওয়েবিনারটি আওয়ামী লীগের সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও বিজয় টিভির পর্দায় ও ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়।