‘যেকোনও ত্যাগের বিনিময়ে মুজিববাদ’

1(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ৩০ জুলাইয়ের ঘটনা।)

রাষ্ট্রের চার মূলনীতির মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যেকোনও ত্যাগের শিকার করার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ১৯৭২ সালের ৩১ জুলাই এই ঘোষণা দেন তারা। পরদিন ১ আগস্ট এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে তৎকালীন জাতীয় দৈনিকগুলো।
খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি কর্তৃক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গত ২৪ বছর বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কোনও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যদি এই ত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় তা বরদাস্ত করা হবে না। সরকার এসব গণবিরোধী ও রাষ্ট্র বিরোধীদের প্রতিহত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি রাজনীতির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, মুজিববাদের মাধ্যমে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাভ সম্ভব। জনগণের স্বার্থে যেকোনও ত্যাগের বিনিময়ে এদেশে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

1
বঙ্গবন্ধু সেসময় লন্ডনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তার পিত্তকোষে অপারেশন সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে বলেও পত্রিকার খবরে বলা হয়। এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। সকালে ঘুম ভাঙার পর তিনি চেয়ারে বসেন। খালি পেটে এক গ্লাস পানি চান। এসময় বেগম মুজিব তার পাশে বসেছিলেন। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মুখপাত্র জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্য যুক্তরাজ্যের সর্বোত্র প্রার্থনা করা হচ্ছে। তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনসাধারণকে খবর দেওয়ার জন্য হাইকমিশন অফিস ২৪ ঘণ্টা খোলা ছিল। প্রবাসী বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর অবস্থা জানার জন্য হাইকমিশনে অনবরত টেলিফোন করছিলেন বলেও প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।

3

এদিকে ঢাকায় তৎকালীন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম লন্ডন থেকে একটি তারবার্তা পান। সেটি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির সভায় পড়ে শোনানো হলে সদস্যরা আনন্দ প্রকাশ করেন।
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির বর্ধিত সভায় বিভিন্ন জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিজ নিজ জেলা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান সমাপ্ত হয় এইদিনে। দিনে ৬ অধিবেশনে দেশের ৫৯ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ প্রতিবেদন দেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কোরবান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ প্রতিনিধি দালাল আইন পরিমার্জনের বিষয়ে মত দেন। সদস্যরা প্রস্তাব করেন রাজাকার-আলবদর-আলশামস পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। তাদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। তাদের মত, দালালদের বিচারের জন্য অযথা সময় এবং অর্থ ব্যয় না করে এর অর্থ দেশ গঠনের নিয়োজিত করা হোক।

2
যৌথ নদী কমিশন নিয়ে উদ্যোগ
একটি যৌথ নদী কমিশন থাকলেও প্রশাসনিক কারণে ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ পক্ষ কাজে এগিয়ে আসতে পারছে না বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষজ্ঞ মহল কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের নদী গবেষণা একটি পূর্ণাঙ্গ সার্বক্ষণিক সেবা দফতর প্রতিষ্ঠিত করতে সুপারিশ করেছেন। বাংলাদেশের যে তিনজন সদস্য রয়েছে তারা কেউই সার্বক্ষণিক সদস্য নয়। তারা প্রত্যেকেই দায়িত্বপূর্ণ নানাবিধ কাজে নিয়োজিত। উল্লেখ্য যে, সিলেটের নদীগুলোর বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ পক্ষে একটি পর্যবেক্ষক দল সম্প্রতি সিলেট সফর করে এসেছেন। জানা গেছে নদী কমিশন এ ব্যাপারে একান্ত প্রয়োজন হলে যৌথ আলোচনাচক্র একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করবেন। উত্তর আসামে বন্যার ফলে বাংলাদেশের রংপুরে দিনাজপুরে সেসময় যে বন্যা দেখা দিয়েছে সে ব্যাপারেও নদী কমিশনের বাংলাদেশ পক্ষের প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা পর্যবেক্ষণ চালানো উচিত বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। আর এজন্য দরকার একটি পৃথক সংস্থা যারা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন।