বঙ্গবন্ধুর লন্ডন সফর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়

৫ ও ৬ তারিখের পত্রিকা কোলাজ
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন এবং এই সফরের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্য নিহিত নেই। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিদেশি পত্রপত্রিকায় কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় সরকারের এক মুখপাত্র এই বক্তব্য দেন। তিনি জানান যে, বঙ্গবন্ধু কেবল স্বাস্থ্যগত কারণে সেখানে গিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এই সফর নিশ্চিত করা হয়। চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য সোভিয়েত সরকারের প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেছেন এই মর্মে কোনও কোনও বিদেশি পত্রিকায় যে খবর প্রকাশ করেছে তা প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, 'মস্কোতে যাওয়ার আমন্ত্রণ লাভের পূর্বেই বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে লন্ডন সফরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফলে সোভিয়েত সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রশ্নই আসে না।' মুখপাত্র জানান, চিকিৎসা প্রস্তাব দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত নেতৃবৃন্দকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছানোর পর থেকে কিছু কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হলে কিছু ইংরেজি পত্রিকা সফরটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা সেই প্রশ্ন তোলে। ভুট্টোর সঙ্গে মিটিং-এর একটি কৌশল হতে পারে কিনা সে নিয়েও কথা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি মুখপাত্রের এই বক্তব্য প্রধান পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ করা হয়।

ইত্তেফাক

সময়োচিত অস্ত্রোপচার

সময়মতো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সম্ভাব্য বিপর্যয় দূর করা গেছে বলে চিকিৎসকরা এই দিন জানান। পিত্তকোষ ও অঙ্গ পরীক্ষার পর এই তথ্য উদঘাটিত হয়। সময়মতো অস্ত্রোপচার করে এবং উপাঙ্গ অপসারণের ফলে অত্যন্ত শক্ত অন্ত প্রদাহের হাত থেকে বঙ্গবন্ধু রক্ষা পেয়েছেন। এদিকে আগের তুলনায় লন্ডন ক্লিনিকে বঙ্গবন্ধু হাসিখুশি ছিলেন বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ফারুক আহমেদ চৌধুরী সরকারি কাজকর্মে ব্যাপারে কিছুক্ষণ আলোচনাও করেছেন। এসময় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন।

দৈনিক বাংলা ১৯৭২

রিলিফের আপডেট দেন ইউএন কর্মকর্তা

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রবার্ট জ্যাকসন ৫ আগস্ট সকালে লন্ডন ক্লিনিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের রিলিফ অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব তার। তিনি জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের শুভচ্ছা পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিউইয়র্ক থেকে বিমানযোগে লন্ডন আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে জানান যে, রিলিফ অভিযান সন্তোষজনকভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং উত্তরবঙ্গের অবস্থার প্রতিও জাতিসংঘ বিশেষ নজর দিচ্ছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দীর্ঘ দুই সপ্তাহব্যাপী বন্যার জন্য ১১ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে এবং ২৬ লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইত্তেফাক। চাঁদপুর এবং পাবনা জেলার বেড়া থানার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বলেও জানায় পত্রিকাটি। বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোয় খাবার পানি, ওষুধপত্র, শিশুখাদ্যের তীব্র অভাব দেখা দেওয়ার খবর দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্গত অঞ্চলে মহামারি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘের সদস্যপদ পেতে পরের সপ্তাহে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। জাতীয় সংবাদপত্রের কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ৩৫ দিন পূর্বে জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্য আবেদন পত্র পেশ করতে হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ জানান, অনুষ্ঠিতব্য জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ যোগদান করবে না। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, দেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি ও জাতিসংঘ সদস্যপদের জন্য আবেদনপত্র দেওয়া ইত্যাদি কারণে তাদের পক্ষে এখন দেশের বাইরে যাওয়া সম্ভব না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই পরিস্থিতিতে স্বদেশ ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

দৈনিক বাংলা ৬ আগস্ট

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, দেশে একটি উচ্চমানের সামরিক একাডেমি স্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন যে, নিজস্ব একটি সামরিক বাহিনী থাকবে এটি বাঙালির বহু দিনের আশা ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে সে আশা পূরণের দিন এসেছে। ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর অফিসারদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন তিনি।

রাষ্ট্রপ্রধান আরও বলেন, বাংলার সামরিক বাহিনী স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ রক্ষা ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজনে প্রাণ বিপন্ন করে সংগ্রাম করে যাবেন তারা। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হবে জনগণের।

তিনি আরও বলেন, দেশ উন্নয়নের সব কাজে ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এগিয়ে যাবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা প্রতিষ্ঠা করেছে সাহস আর আত্মপ্রত্যয়ের নজির।