স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১৫ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, রাজধানী ঢাকার কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় এমন হাসপাতালের সাত হাজার ৬২টি শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন দুই হাজার ২১৮ জন, আর শয্যা খালি রয়েছে চার হাজার ৮৪৪টি। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) রয়েছে ৩০৫টি, রোগী ভর্তি আছেন ২০৪ জন। আর শয্যা খালি রয়েছে ১০১টি। আর সারাদেশে কোভিড রোগীদের জন্য মোট শয্যা রয়েছে ১৫ হাজার ২৮০টি, রোগী ভর্তি আছেন চার হাজার ৩৬৪ জন। অন্যদিকে শয্যা খালি রয়েছে ১০ হাজার ৯১৬টি। এছাড়া সারাদেশে আইসিইউ সিট রয়েছে ৫৪৩টি, রোগী ভর্তি আছেন ৩২৫ জন। আর শয্যা খালি রয়েছে ২১৮টি।
আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, করোনায় মৃত্যুর হার জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম, আমাদের সুস্থতার হার অনেক ভালো, ৬০ শতাংশের বেশি। সংক্রমণের হার কমে আসছে। তিনি জানান, হাসপাতালের ৭০ শতাংশ বেড খালি।
এর আগে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছিলেন, কিছু কোভিড হাসপাতাল কমিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করছি আমরা। কারণ হাসপাতালগুলোতে অনেক সিট খালি থাকছে। আবার যেসব হাসপাতালে কোভিড এবং নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা হয় সেসব হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা আসতে চাইছে না, তারা চিকিৎসা নিতে পারছে না। তাই পর্যায়ক্রমে কোভিড ও নন-কোভিড এই দুই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এমন হাসপাতাল থেকেও কোভিড ইউনিট তুলে নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কোভিড চিকিৎসা তুলে নেওয়ার প্রাথমিক তালিকাতে রয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় প্লাস্টিক ও বার্ন ইনস্টিটিউট, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিপরীত কথা। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে কোনও পরামর্শ নেওয়া হয়নি। পরামর্শক কমিটি হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে কোনও পরামর্শও দেয়নি। অন্যদিকে সরকার বলছে, কোভিড হাসপাতালের সিট খালি রয়েছে, সেগুলোকে নন কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হবে। এতে ধারণা হবে, আমাদের বোধহয় সব ‘মিটে’ গেছে’। এতে করে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ যেসব স্বাস্থ্যবিধিতে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত হয়েছিল, সেগুলোতে ঢিলেমি আসবে।
কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল কমানোর সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে করোনা রোগী আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুসংখ্যাসহ সব সূচক ঊর্ধ্বগতি। করোনা আক্রান্তের পর তার কন্টাক্ট ট্রেসিং সবচেয়ে জরুরি, অথচ দেশে সেটা হচ্ছে না। আর সেটা না হলে সংক্রমণ হচ্ছেই। আর সেখানে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হবে, তাহলে সেটা কতটুকু যৌক্তিক সেটা আবার ভেবে দেখা প্রয়োজন। এতটা রিলাকটেন্ড হওয়ার কোনও সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, কোভিড নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যদি হাসপাতাল কমিয়ে আনা হয়, তাহলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে যে, দেশে করোনা নাই। সেটা কতটা ভয়ঙ্কর হবে, কেমন করে হাসপাতাল কমিয়ে আনার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে সেটাও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বুঝে নেওয়া দরকার।
অধ্যাপক বে-নজির আরও বলেন, হাসপাতাল বন্ধ করার বিষয় নয়। বর্তমান পরিস্থিতি কী, সামনে কী পরিস্থিতি হতে পারে সেভাবে আমাদের কোভিডের জন্য ব্যবস্থাপনা এমনভাবে রাখা দরকার। যাতে প্রয়োজনে সংকুচিত এবং চাহিদা অনুযায়ী প্রসারিত করা যায়।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। পরে যোগ হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। ধীরে ধীরে আরও সরকারি হাসপাতালকে কোভিডের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়। এরপর গত ২৪ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনাতে বলা হয়, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকে কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হলো।