বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল

ফিরে দেখা ১৯৭২

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৯ আগস্টের ঘটনা।)

বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।  নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীর আশা প্রকাশ করে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে  তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠছি।’ প্রধানমন্ত্রী মান্থলি ম্যাগাজিন ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সম্পাদক উইলিয়াম এস এলিসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের দেশের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আমরা কষ্ট ভোগ করছি। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি, বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমরা এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবো ইনশাল্লাহ।’ সাক্ষাৎকারগ্রহীতা বঙ্গবন্ধুর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘জাতির নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্বই জাতির আসা এবং তার মাধ্যমেই তারা স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করতে চায়।’

দৈনিক বাংলাসাক্ষাৎকারগ্রহণকারী তার প্রবন্ধে নবীন জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা ও দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। স্বাধীনতার জন্য তাদের মরণজয়ী সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তী তিতিক্ষার পরিচয় সম্পাদক তার লেখায় তুলে ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তাদের (বাঙালির) সংগ্রামের ওপর আলোকপাত করেন।  প্রবন্ধের সঙ্গে ৩২টি রঙিন আলোকচিত্র প্রকাশ করা হয়।  এতে বলা হয়, স্বাধীনতায় উজ্জীবিত বাঙালি মানুষ এক অবিশ্বাস্য আশাবাদে জাগ্রত। হতাশার মধ্যেও তারা সুদিনের প্রত্যাশা করে।

বাংলাদেশ অবজারভার

নতুন ভোটার তালিকার আদেশ জারি

১৯৭২ সালের শুরুর উদ্যোগ ছিল একটি শাসনতন্ত্র প্রস্তুত করা। কমিটি কাজ শেষ করে আগস্টে খসড়া প্রস্তুত করে। ২৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ‘বাংলাদেশ ভোটার তালিকা ১৯৭২’ নামে নতুন আদেশ জারি করেন। এই আদেশ অবিলম্বে প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ও তালিকার ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স্কদের ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়। যাদের বয়স ১৮ তারাই এর অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ভোট প্রদান করতে পারবেন। আদেশে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়, আগামী মাসের পয়লা তারিখের মধ্যে (সেপ্টেম্বর) যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারা ভোটার বলে গণ্য হবেন। ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চের আগে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী যে ব্যক্তি অথবা যে ব্যক্তির পিতা ও পিতামহ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি ভোটার বলে পরিগণিত হবেন। ভোটার তালিকা তৈরি করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ইত্তেফাক নির্বাচনি এলাকার জন্য একজন রেজিস্ট্রেশন অফিসার নিয়োগ করবেন। তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ভোটার তালিকা প্রস্তুত করবেন। এছাড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুতের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনবোধে আরও অফিসার ওকর্মচারী নিয়োগ করতে পারবে। উক্ত আদেশে বলা হয়, সংশোধিত ভোটার তালিকা ঘোষিত নীতি অনুযায়ী বজায় রাখা হবে এবং এই সঙ্গে আরও সংশোধন ও ভুল তথ্যের জন্য নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করা হবে। ভোটার তালিকা সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ্যে রাখা হবে। আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, কোনও এলাকার ভোটার তালিকা প্রণয়নে মারাত্মক ভুল-ত্রুটি অথবা অনিয়ম কোনও কিছু ধরা পড়লে নির্বাচন কমিশন সেই এলাকার ভোটার তালিকা বাতিল করে নতুন ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে পারবেন। কোনও ব্যক্তি একাধিক এলাকার ভোটার হতে পারবেন না। দালালির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি ভোটার হতে পারবেন না।


দৈনিক বাংলা

দালাল আইন সংশোধন

দালাল আইন সংশোধনের পর সরকারি বিধি অনুযায়ী, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কোনও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দালালদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে পারবেন। আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ১৯৭২ সালের ২৯ আগস্ট এ কথা ঘোষণা করেন। পরিষদ ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দালালদের বিচার যথা শিগগির সম্ভব সম্পন্ন করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। ’আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু দালালদের দ্বারা সংঘটিত ইত্তেফাকঅপরাধমূলক কাজ দখলদার আমলে সাধিত হয়, ফলে বর্তমানে এদের অপরাধ সম্পর্কে তদন্ত চালিয়ে কতগুলো অস্বাভাবিক সমস্যা দেখা দেয়।’ তিনি বলেন, ‘‘সরকার খুব শিগগিরই বাংলাদেশে ‘পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচারের জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে।’’