বাংলাদেশকে জাতিসংঘে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে চীন আবারও ভেটো প্রয়োগের হুমকি দেয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে গৃহীত জাতিসংঘ প্রস্তাব বাস্তবায়িত না হলে চীন তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করবে বলে জানিয়ে দেয় বেইজিং। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো আয়োজিত নৈশভোজে ভাষণদানকালে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিয়াও কুরান হুয়া এই হুমকি দেন। তিনি বলেন, ন্যায়ের পতাকাকে সমুন্নত রাখার জন্যই চীন বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির আবেদনের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে। এটা একটা ন্যায়সঙ্গত ভেটো । দরকার হলে আবার ভেটো প্রয়োগ করা হবে। চিয়াও বলেন, চীন-পাকিস্তান মৈত্রী আরও মজবুত করার জন্য তিনি পাকিস্তানে এসেছেন বলেও উল্লেখ করেন। তার বক্তব্যের আগে ভুট্টো বলেন, পাক-চীন বন্ধুত্ব সামনের দিকেই এগোবে। পাকিস্তান চীনের পাশে থাকবে কারণ চীন-পাকিস্তানের পাশে থেকেছে।
জেনেভা থেকে বাসস প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চীনের ভেটো ভুট্টোকে পাকিস্তানে তার দলের ভাবমূর্তি আবার চাঙ্গা করার সুযোগ দিচ্ছে। তবে পাশ্চাত্যের কূটনৈতিক মহলের মতে, পাকিস্তানের অনুরোধে নয় তার নিজের বিশ্বনীতির স্বার্থে বিশেষ করে নয়া সোভিয়েত বিরোধী কূটনৈতিক অভিযানকে তীব্রতর করার অভিপ্রায়ে চীন জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতাকে প্রয়োগ করেছে।
সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরবে বঙ্গবন্ধু
লন্ডনে চিকিৎসা ও সুইজারল্যান্ড বিশ্রাম শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩ সেপ্টেম্বর বা ৫ সেপ্টেম্বর কোনও এক তারিখে ঢাকা রওনা হবেন বলে ১৯৭২ সালের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত পত্রিকার খবরে জানানো হয়। তবে ৩১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে সঠিক দিনটি জানানো হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। জেনেভায় প্রকাশিত এক স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানানো হয় বঙ্গবন্ধু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। ভিটামিন ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ বঙ্গবন্ধুকে এখন আর খেতে হচ্ছে না। আগামী দু-একদিনের মধ্যে তিনি অল্প ভ্রমণ করতে সক্ষম হবেন। ৩০ তারিখ সকালে বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি কমিশনার নুরুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় মিলিত হন। জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনার প্রিন্স আগা খান ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
জাতীয় ঐক্য রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক কাপাসিয়ায় বলেন, চীন ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইঙ্গিতে জাতীয় স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য কিছু লোক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। রাজ্জাক বলেন, মুসলিম লীগ, জামায়াত, আলবদর প্রভৃতি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা সরকারকে নাজেহাল করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। মীরজাফর অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং ওইসব পরগাছাকে বিশ্বাস না করতে আহ্বান জানান রাজ্জাক। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক সাম্রাজ্যবাদের যোগসাজশে মওলানা ভাসানীর বিপ্লবীদের সমালোচনা করেন।
সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
গণভবনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে খাদ্য সমস্যা, দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সীমান্তে চোরাচালান, কালোবাজারি, মজুতদারি ও দেশের অন্যান্য অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বন্যা নিয়ন্ত্রণ খন্দকার মোশতাক আহমেদ, খাদ্যমন্ত্রী ও রাজস্ব মন্ত্রীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে দেশের অভ্যন্তরে খাদ্য চলাচল আরও ত্বরান্বিত করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এ ব্যবস্থার অধীনে প্রতিদিন চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর-কুমিল্লার উদ্দেশে দুটি ট্রেন খাদ্যশস্য বোঝাই করে নেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।