পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের রক্ষায় বিশ্ব বিবেকের প্রতি আবেদন

image3
(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের রক্ষা ও তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য আবারও বিশ্ব বিবেকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক রেডক্রস সমিতি সমূহের প্রেসিডেন্ট মিস্টার নেভিলকে বলেছেন, পাকিস্তানে আটক পাঁচ লাখ বাঙালির শারীরিক নিরাপত্তা এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মিস্টার নেভিল ১৯৭২ সালের ১ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধু তাকে এই কথা বলেন। তাদের আলোচনা প্রায় এক ঘণ্টা চলে।

image0গণদুশমনদের দমনে সব ব্যবস্থা
অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এইদিন চট্টগ্রামে বলেন, চোরাকারবারিদের সমস্ত তৎপরতা বন্ধ করার জন্য রক্ষীবাহিনী এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে যদি তারা কোনও বাধার সম্মুখীন হয় তবে চোরাচালানকারীদের গুলি করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জনগণের দুঃখ দুর্দশাকে বেসাতি করে যারা চোরাচালানি মজুত এবং কালোবাজারি করছে তাদের সমস্ত তৎপরতা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সরকার সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম লালদীঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। এসময় তিনি বলেন, সমাজবিরোধীদের তৎপরতা বন্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রয়োজনীয় যে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। সমাজবিরোধীদের দমনে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে কোনও শৈথিল্য প্রদর্শন করবে না।

image4দেশি ও বিদেশি শক্তি ষড়যন্ত্রে মেতেছে
অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম চট্টগ্রামের সমাবেশে বলেন, স্বাধীনতার সুফল নস্যাৎ করার জন্য দেশি ও বিদেশি শক্তি একযোগে ষড়যন্ত্র করছে। ১ সেপ্টেম্বরের ওই বিরাট জনসভায় ভাষণকালে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি শক্তি আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে বিরোধিতা করে এসেছে। তারাই আমাদের স্বাধীনতার সুফল নস্যাৎ করার জন্য তৎপর। আমাদের সাধারণতন্ত্র বেশি দিন টিকবে না এই ধারণা সৃষ্টির জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছে। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদে চীনা ভেটোর কথা উল্লেখ করেন।

image2ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করতেও প্রস্তুত
সীমান্তে চোরাচালান বন্ধের উদ্দেশে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র উল্লেখ করেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র বাংলাদেশে ভারতবিরোধী প্রচারণার সমালোচনা করে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, সীমান্তে চোরাচালানে ভারতের স্বার্থ রয়েছে এবং চোরাচালান বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ভারতের প্রচেষ্টায় শৈথিল্য রয়েছে বলে অপপ্রচার চলছে।

বাংলাদেশে কোনও কোনও মহল যে জঘন্য ভারতবিরোধী প্রচারণার লিপ্ত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সীমান্তে চোরাচালানকারীদের ভারতের স্বার্থ রয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। চোরাচালানিতে কোনও দেশের সরকার ও জনগণ যে লাভবান হতে পারেন না এ কথা সবারই জানা আছে।
ওই সরকারি মুখপাত্র আরও বলেন, ভারত সরকার তার নিজের স্বার্থেই চোরাচালান বন্ধের ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারের মতোই একইভাবে আগ্রহী। ভারত সরকার চোরাচালান বন্ধ করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন।