রাখাইনে আবার 'অপারেশন ক্লিয়ারেন্স' জোরদার করেছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী

সেনা তাণ্ডবের মুখে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা (ফাইল ছবি)

৮ নভেম্বর মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাখাইনে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য 'অপারেশন ক্লিয়ারেন্স' জোরদার করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আগস্টে চক্তো, রথিডং ও মিনবাও অঞ্চলের প্রায় ১০টি গ্রামে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী হামলা চালািয়ে কয়েক শত ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং এর ধারাবাহিকতা সেপ্টেম্বরে আরও বেড়েছে। সম্প্রতি সীমান্তে সৈন্য সমাবেশসহ সীমান্ত সংলগ্ন মংদু অঞ্চলে বেশ কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ঢাকার একাধিক সূত্র।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, 'মংদু অঞ্চলে সেনাবাহিনী মুসলিম রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে এবং অনেককে ধরে নিয়ে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।'

তিনি বলেন, 'তারা যে শুধু পুরুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তাই নয়, গত সপ্তাহে বেশ কয়েকজন নারীকেও আটক করেছে এবং তারা এখনও ফেরত আসেনি।'

উল্লেখ্য, ২০১৭ এর আগস্টে অপারেশন ক্লিয়ারেন্স এর অধীনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যা এখনও বলবৎ আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক বলেন, 'রাখাইনে কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু মিয়ানমারের সরকার এগুলি তোয়াক্কা করছে না।'

তবে তিনি বলেন, 'এটি স্নায়ুর যুদ্ধ এবং কূটনীতিতে হতাশার কোনও স্থান নেই। বাংলাদেশকে চেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক উভয়ভাবেই চেষ্টা করতে হবে।'

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার নিয়ে আবার রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রাখাইনে একটি সেফ জোন প্রতিষ্টার জন্য আলোচনা হবে।'

তিনি বলেন, '২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেফ জোনের কথা বলেছিলেন এবং এ বিষয়টি এখন আবার সামনে আসছে কারণ রাখাইনে ফেরত যেতে রোহিঙ্গারা ভয় পাচ্ছে।'
এই সেফ জোন আন্তর্জাতিকভাবে বেসামরিক ব্যক্তিদের দিয়ে পরিচালিত হতে পারে বলে তিনি জানান।

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মোহাম্মাদ শহীদুল হক বলেন, 'রাখাইনে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য মিয়ানমার এখন সেখানে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।'

ইতোমধ্যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইনসহ আরও কয়েকটি জায়গায় নির্বাচন স্থগিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই অঞ্চলগুলিতে সামরিক বাহিনী সমর্থিত দল দুর্বল এবং তারা এখানে কখনোই জেতেনি।'