আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশাসনকে পরামর্শ ও উপদেশ বঙ্গবন্ধুর

১৯ সেপ্টেম্বর (১৯৭২) বাংলাদেশ অবজারভারে প্রকাশিত ছবি

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

প্রশাসনকে নতুন রাষ্ট্রের চাহিদা মেটাতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, যেসব সরকারি কর্মচারী এখনও পাকিস্তানের মানসিকতা পরিত্যাগ করতে পারেননি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গণভবনে আয়োজিত কমিশনারদের দুই দিনব্যাপী  সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণদানকালে এসব কথা বলেন।

সম্মেলনে কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, সহকারী পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, পুলিশ প্রধানসহ অনেকে যোগদান করেন। এছাড়া এতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যেসব সরকারি কর্মচারীর কর্তৃত্বাধীন এলাকায় সমাজবিরোধী তৎপরতার চলবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য তিনি বেশ কিছু কর্মচারীর প্রশংসাও করেন।

উদ্বোধনী বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতি, কালোবাজারি, চোরাকারবারি প্রভৃতি সমাজবিরোধী কার্যকলাপ সম্পর্কে সজাগ ও তৎপর থাকার জন্য সব পর্যায়ের অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানান। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে ব্যবসা যাতে না হয়, সে ব্যবস্থা করা দায়িত্বে অফিসারদের ওপরই ন্যস্ত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বৈপ্লবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করার ব্যাপারে তিনি কর্মচারীদের আহ্বান জানান এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য পরিহার করে আন্তবিভাগীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রশাসনিক বাধা-বিপত্তি নিরসনের জন্য কর্মচারীদের উপদেশ দেন।

বাংলাদেশ অবজারভার, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২যে বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন

বঙ্গবন্ধু নতুন রাষ্ট্রের চাহিদা মোকাবিলায় প্রশাসনযন্ত্রকে আরও তৎপর করে তোলার জন্য আহ্বান জানান। খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘অবশ্যই দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে আনতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন। দখলদার বাহিনীর দ্বারা বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রশাসনকে অবহিত করা প্রত্যেক কর্মচারীর দায়িত্ব। জনগণ যাতে স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে, এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনগণের সেবক হিসেবে আমাদের অবশ্যই আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’

পহেলা অক্টোবর থেকে ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ন্যায্যমূল্যের দ্রব্যাদি সরবরাহ স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে এসব দোকান খোলা হচ্ছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশ সব সময়ের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না।’ জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সব ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য কর্মচারীদের নির্দেশ দেন।

দৈনিক বাংলা, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

স্বাধীনতার পর অস্ত্রসমর্পণের বিষয়টি দুনিয়াজোড়া প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। তবে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কতিপয় লোক এখনও অস্ত্রসমর্পণ করেনি। তারা এর সাহায্যে অপরাধমূলক ও শান্তি বিঘ্নিত করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। যথাসম্ভব এদের আটক করতে হবে এবং যেসব অভিযোগ রয়েছে তা দূর করতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতার আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতির ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনারকে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য সব জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দান করেন। ডেপুটি কমিশনারদের সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২শিগগিরই শাসনতন্ত্র

শিগগিরই শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ শেষ হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি কমিশনারদের সভা উদ্বোধনকালে বলেন, ‘সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আর তা নিশ্চিত করার জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও নির্বাচন অনুষ্ঠান জরুরি।’

কাল থেকে সাধারণ পরিষদের সভা

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৭তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। চীনের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও জাতিসংঘের সাধারণ কমিটির সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির জন্য যুগোস্লাভিয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করবে বলে আশা করা যায়। বাসস এ সংবাদ জানায়।