গণপরিষদের অধিবেশন নিয়ে উদগ্রীব বঙ্গবন্ধু

দৈনিক বাংলা, ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭২(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন হওয়ার পর দ্বিতীয় অধিবেশন অক্টোবরে হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৯ অক্টোবর সম্ভাব্য তারিখ বিবেচনায় নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত মহলের বরাত দিয়ে ১৯৭২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দৈনিক বাংলার খবরে প্রকাশ করা হয়—প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে শাসনতন্ত্র প্রদানের জন্য যথাসম্ভব শিগগিরই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য খুবই উদগ্রীব। আর এর জন্য গণপরিষদের অধিবেশন জরুরি।

৯ অক্টোবর অধিবেশন

দৈনিক বাংলার সংবাদে বলা হয়, ৯ অক্টোবর থেকে খুব সম্ভবত বাংলাদেশের গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। বলা হয়, এটা গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই অধিবেশনেই জাতির শাসনতন্ত্র গৃহীত হতে যাচ্ছে। গণপরিষদের অধিবেশনে চারটি পরিষদ কমিটির রিপোর্ট আলোচিত ও গৃহীত হবে বলে আশা করা হয়। এ চারটি পরিষদ কমিটি হলো—শাসনতন্ত্র রচনা কমিটি, পরিষদের সদস্যদের অধিকার সংক্রান্ত কমিটি, কার্যবিধি বিষয়ক কমিটি ও পরিষদ কমিটি। ১০ এপ্রিল গণপরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব কমিটি গঠিত হয়েছিল। শাসনতন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য বেশ কিছু দিন ধরে ঢাকায় রচনা কমিটির বৈঠক নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছিল এবং শিগগিরই খসড়ার চূড়ান্ত রূপ আসছে বলেও আশা করা হয়। গণপরিষদের বৈঠক শুরুর আগেই শাসনতন্ত্র রচনার কাজ সম্পন্ন হবে এদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ সূত্রে বলা হয়।

বাংলাদেশ অবজারভার, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২শাসনতন্ত্র নিয়ে পরিকল্পনা

সূত্রে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর পিত্তকোষে অস্ত্রোপচারের পর জেনেভায় স্বাস্থ্য উদ্ধারকালেও বঙ্গবন্ধু শাসনতন্ত্র রচনা কমিটির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করেন। আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি আরও জানায় যে, শাসনতন্ত্রে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি বিপ্লবী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন অবশ্যই ঘটবে। শাসনতন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত চার নীতি—গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদভিত্তিক হবে। উক্ত সূত্র আভাস দেয় যে, শাসনতন্ত্র যথানিয়মে গৃহীত হলে দেশের সাধারণ নির্বাচন আগামী বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সম্ভবত অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মো. ইদ্রিস ইতোমধ্যে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের বিষয়ে ঘোষণাও করেছেন।

দুর্নীতির সঙ্গে কিছু আমলার যোগসাজশ

আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক বাংলা পত্রিকার সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মজুতদারবিরোধী অভিযানে জনগণ খুশি হয়েছিল। কিন্তু যাদের ধরা হয়েছে, তাদের উদাহরণমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। এতে জনগণ নিরাশ হয়েছে। আবার যদি অভিযান চালানো হয়, তবে জনগণ অবশ্যই সাড়া দেবে। কিন্তু তারা চায় অপরাধীদের উপযুক্ত সাজা হোক। আমলারা সরকারের নির্দেশ পুরোপুরি কার্যকর করছে না। কারণ, তাদের সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের যোগসাজশ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রশাসক প্রথা বাতিল করে শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে অচিরেই ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হবে।’ তা না-হলে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের ব্যর্থতা সমাজতন্ত্রের পথে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু

নয়াদিল্লি থেকে পাঠানো সংবাদে বলা হয়, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে। ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হবে। বাংলাদেশের সদস্যদের সাধারণ পরিষদের আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যুগোস্লাভিয়া এরইমধ্যে সাধারণ কমিটির কাছে সুপারিশ করেছে। সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশের সদস্য পদে আবেদনের অনুকূলে সুপারিশ করলে বিষয়টি পুনরায় নিরাপত্তা পরিষদের উত্থাপিত হবে। পোল্যান্ডের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের নতুন সভাপতি হবেন বলে বাসসের খবরে প্রকাশ করা হয়।