মূল্য হ্রাসে ‘বণ্টন ও পরিবহন’ সুষ্ঠু করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

দৈনিক বাংলা, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭২বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

খাদ্য ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে ১৯৭২ সালের মধ্যবর্তী সময় থেকেই বেশ উদ্বিগ্ন সময় কাটাতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ২১ সেপ্টেম্বর গণভবনে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বঙ্গবন্ধু দেশের বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। খাদ্যমন্ত্রী ফনিভূষণ মজুমদার, যোগাযোগমন্ত্রী মনসুর আলী, খাদ্য ও যোগাযোগ দফতরের পদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠকে যোগদান করেন। গণভবনে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে দেশের বর্তমান খাদ্যশস্যের মজুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরে আগামী তিন মাসের এবং এক বছরের জন্য খাদ্যের চাহিদার পরিমাণ হিসাব-নিকাশ করে দেখা হয়।

বাংলাদেশ অবজারভার, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭২তিন মাস ও এক বছরের পরিকল্পনা

তিন মাসের জন্য খাদ্যশস্য বণ্টনের কর্মসূচি ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা বণ্টনের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধু। খাদ্য ঘাটতি এলাকার জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য পাঠানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। একইসঙ্গে ঘাটতি এলাকায় সময়মতো যাতে খাদ্যশস্য পৌঁছায় এবং ওইসব এলাকার জনগণের যাতে খাদ্যশস্যের জন্য কোনও রকম কষ্ট না হয়, তার ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। ঘাটতি এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে খাদ্যশস্য ও অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের মূল্য কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে দাম কমিয়ে আনার জন্য পরিবহন বিষয়ে সতর্কভাবে ভাবতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭২দুর্নীতিবাজ এমসিএ’দের রেহাই নেই

দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ দলীয় ২০ জনের বেশি গণপরিষদ সদস্য তাদের পদ থেকে বহিষ্কৃত হবেন বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় মহল সংবাদ সংস্থা এনাকে জানায়, দুর্নীতিপরায়ণ পার্টি এমসিএ’র সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সাংগঠনিক কমিটির সভায় তালিকা পেশ করা হবে। ওই বছর  ২৭ সেপ্টেম্বর পার্টির সাংগঠনিক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সাংগঠনিক কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনও সদস্য পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হলে গণপরিষদে তিনি আসন হারান। সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, পার্টির প্রধান বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুসারে, দুর্নীতিমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এমসিএ’র বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ, বঙ্গবন্ধু পার্টিকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের কবল থেকে মুক্ত রাখতে চান। সূত্র আরও জানায়, পার্টির শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কেন তাদের পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে না, তার কারণ দর্শানোর জন্য কতিপয় নেতাকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭২চীনের ভেটো সত্ত্বেও সাধারণ পরিষদের আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশ

জাতিসংঘে ২১ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশের সদস্যপদ সংক্রান্ত প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়। চীন, লিবিয়া, গিনি এবং মোরিতানিয়া—এই চারটি দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ভোট দেয় জেনারেল কমিটি। ১৭টি দেশ পক্ষে ভোট দেয়। আর যুগোস্লাভিয়া উত্থাপন করেছিল যে, প্রস্তাবটির বিপক্ষে চারটি দেশ-বিদেশ ভোটদানে বিরত থাকে।

ফিলিপাইন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও ভোটদানে বিরত থাকার কারণ হিসেবে বলে—এভাবে প্রস্তাব উত্থাপন করা ঠিক হচ্ছে না। সিরিয়া ও ইথিওপিয়া কোনও কারণ দেখায়নি। যারা পক্ষে ভোট দিয়েছে তারা বলেছে যে, বিষয়টি বিবেচনায় সাধারণ পরিষদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। যুগোস্লাভিয়ার প্রস্তাবটি কবে নাগাদ উত্থাপিত হবে, তা এখনও জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হচ্ছিল অক্টোবরের শেষ দিকে কিংবা নভেম্বরের প্রথম দিকে এটা পরিষদে উত্থাপিত হবে। সাধারণ কমিটির সভার সময় সমর সেনের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল। প্রস্তাবটি উত্থাপনের সময় যুগোস্লাভ প্রতিনিধি জোরালো ভাষায় বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে উত্থাপিত হওয়া দরকার।’ তবে চীন তার পুরনো সুরেই এর বিরোধিতা করেছে।