আস্থা ও জনসমর্থন নিয়ে গণপরিষদ বসবে ১২ অক্টোবর

1(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়, পরবর্তী মাসের ১২ তারিখে গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হবে।  সেদিন সকাল সাড়ে নয়টায় গণপরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেছেন রাষ্ট্রপ্রধান। ১২ অক্টোবর গণপরিষদ অধিবেশনের চূড়ান্ত আলোচ্যসূচি প্রণয়নকল্পে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করা হয়। এছাড়া ২৭ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।

নতুন করে এবং চূড়ান্তভাবে দেশে শাসনতন্ত্রের ওপর দৃষ্টি দিতে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা আলোচনা করতে ওই সভা আহ্বান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির প্রথম বৈঠক এবং কমিটির সভায় ভাষণ দিতে পারেন বলেও জানানো হয়। এদিকে গণপরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে গণপরিষদ সচিবালয়ের তৎপরতা শুরু হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বারবার বলেছেন, তিনি যত শিগগির সম্ভব দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন। তিনি শাসনতন্ত্রের প্রধান রূপরেখা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনাও করেছেন বেশ আগেই। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ হবে শাসনতন্ত্রের মূলভিত্তি। সংবিধানে স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে এবং এমন সমাজ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা থাকবে যে সমাজে মানুষ মানুষের কিংবা এক অঞ্চল কর্তৃক আরেক অঞ্চলের শোষণের সুযোগ থাকবে না। এই লক্ষ্য সামনে রেখে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কতগুলো বিপ্লবী পদক্ষেপও নিয়েছেন। দেশবাসীর প্রতি তার একটি প্রতিশ্রুতি দুর্নীতি দমন। সেই প্রতিশ্রুতি পালনকালে তিনি তার নিজ দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন সবার আগে এবং ৪৩ জন এমসিএ-এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেন। তার সমালোচকরাও এসব ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন। এই পটভূমিতে আস্থা ও জনসমর্থন নিয়ে গণপরিষদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে।

3

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই অধিবেশন?

প্রথম অধিবেশনের ছয় মাস পর এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ইতিহাসের প্রথম অধিবেশনে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শুরু করে কমিটি। চূড়ান্ত করে বিলটি বাংলায় পেশ করা হবে। কারণ, দেশের শাসনতন্ত্র বা সংবিধান বাংলা ভাষাতেই প্রণীত হওয়ার কথা। ১৯৭২-এর এপ্রিল মাসের ১০ ও ১১ তারিখে ঢাকায় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল। দুই দিনের এই অধিবেশনে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটিসহ চারটি কমিটি নিয়োগ করা হয়েছিল। এছাড়া দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং গণপরিষদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হয়। গণপরিষদের প্রথম স্পিকার এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে পরলোকগমন করেন এবং তারপর থেকে ডেপুটি স্পিকারই স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। অধিবেশনের প্রথম দিনেই শাসনতন্ত্র চূড়ান্ত করার আগে স্পিকার নির্বাচন করা হবে গণপরিষদের প্রথম কাজ।

দেশ পুনর্গঠনে ছাত্রীদের এগিয়ে আসার আহ্বান বঙ্গবন্ধুর

ছাত্রীদের সম্মেলনের উদ্দেশে ১৯৭২ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাণী দেন। তিনি দেশ পুনর্গঠনে ছাত্রীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন কাজে অন্যদের সঙ্গে ছাত্রীদেরও এগিয়ে আসতে বলেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (নূরে আলম-মাখন) শামসুন্নাহার হল শাখার বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে পাঠানো এক বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ শান্তি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। ছাত্রীরা দেশের অধিকাংশের কাছে শান্তিপূর্ণ মুখপাত্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে সমাজের অন্যদের মতো ছাত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। তিনি সম্মেলনের সাফল্য কামনা করেন এবং সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন।

2

পদত্যাগ করে রেহাই মিলবে না

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, কিছু সংখ্যক আওয়ামী লীগ কর্মী-সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও চোরাচালানের অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত চলছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ শাস্তি থেকে অব্যাহতি লাভের উদ্দেশ্যে তদন্তের আগে দল থেকে পদত্যাগ করছেন। জিল্লুর রহমান পরিষ্কারভাবে জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে এবং কেউ অব্যাহতি লাভ করবেন না।