লেবাননফেরত ৩২ প্রবাসীর ভাগ্যেও কি জেল!

ভিয়েতনামফেরত বাংলাদেশিদের কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পুলিশ ভ্যান

ভাগ্য বদলাতে লেবানন গিয়েছিলেন তারা। পরিবারের আর্থিক উন্নতির স্বপ্নে দেশত্যাগ করলেও তাদের ভাগ্য বদলায়নি। ১৩ সেপ্টেম্বর লেবানন থেকে দেশে আসার পর করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট না থাকায় তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তাদের কোয়ারেন্টিন শেষে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার কথা। তবে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। গত বৃহস্পতিবার থেকে তুরাগ থানা পুলিশ তাদের নাম, ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য এবং মালামাল জব্দ তালিকার মতো করে তাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্রের তালিকা করেছে। ভিয়েতনাম ফেরত প্রবাসীদের যেমন কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, এমনভাবে তাদেরও কারাগারে পাঠানো হবে কিনা এমন আতঙ্কে ভুগছেন ৩২ জন লেবানন প্রবাসী, যাদের মধ্যে দুই নারীও রয়েছেন।
লেবাননে আর্থিক মন্দা দেখা দেওয়ায় অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা চালান। লেবানন থেকে ফেরত আসা ৩২ জনই ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে সিরিয়া সীমান্তে ধরা পড়েন। এরপর সিরিয়ার কারাগারে পাঠানো হয় তাদের। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সিরিয়া তাদের বেশিদিন কারাগারে না রেখে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ক্যাম্পে হস্তান্তর করে। অন্যদিকে সিরিয়ার বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় লেবানন থেকেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় তাদের।

জানা গেছে, লেবানন থেকে ইউরোপে নিতে কিছু দালাল চক্র কাজ করে। লেবানন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রথমে সিরিয়া, এরপর তুরস্ক হয়ে গ্রিস নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত আসতে দালালদের দিতে হয় তিন লাখ টাকা। গ্রিস থেকে ইউরোপের যে কোনও দেশে যেতে দিতে হয় আরও তিন লাখ।

৩২ জন লেবাননফেরত বাংলাদেশির সবাই ইউরোপ যেতে লেবাননের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সিরিয়ায় আটক হন। সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটতে হয় তাদের। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দেশে ফিরতে পারেননি তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লেবানন প্রবাসী বলেন, ‘২০১৫ সালে লেবাননে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের দেশের অবস্থা ভালো না। কোনও কাজ নেই। সেজন্য ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সিরিয়া সীমান্তে ধরা পড়ে যাই। সেখানে ৩৩ দিন আমাকে জেলে রাখা হয়। পরে জাতিসংঘের ক্যাম্পে আমাদের পাঠানো হয়। সেখানে ছিলাম এত দিন। ১৩ সেপ্টেম্বর দেশে আসছি। এখানে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ এসে আমাদের তথ্য নিয়ে গেছে। একবার শুনলাম ছেড়ে দেবে, আরেকবার শুনি আমাদের জেলে নেবে। এমনিতেই আমাদের কপাল পুড়েছে, এখন দেশে আসার পরও কী হতে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না।’

লেবাননে ২০১০ সালে গিয়েছিলেন মিজানুর রহমান। তিনিও জানুয়ারি মাসে ইতালি যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। তবে আটক হন সিরিয়া সীমান্তে। ১০ দিন সিরিয়ায় জেল খাটেন। মিজান বলেন, ‘এরপর জাতিসংঘের ক্যাম্পে আমাকে পাঠানো হয়। সেখানে দেখলাম আরও অনেক বাংলাদেশি আটকে আছেন। সবাই কোনও না কোনোভাবে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। এখন আমাদের কী হবে বুঝতে পারছি না। বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশ আমাদের তথ্য নিচ্ছে।’

কুমিল্লার ছেলে আল আমীন লেবাননে গিয়েছিলেন ২০১১ সালে। লেবাননের অর্থনৈতিক মন্দায় কাজ হারিয়ে ফেলেন তিনি। দালালের পরামর্শে ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি লেবানন থেকে সিরিয়া প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েন। আল আমীন বলেন, ‘সিরিয়ায় আমাকে একদিন জেলে রাখা হয়েছিল। এরপর জতিসংঘের ক্যাম্পে।’

সূত্র জানায়, ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন শেষে ২৭ কিংবা ২৮ সেপ্টেম্বর তাদের কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। ভিয়েতনাম প্রবাসীদের ৫৪ ধারায় মামলা করা হয়েছিল, তাদের মতো লেবানন ফেরতদের বিরুদ্ধেও ৫৪ ধারায় মামলা করা হবে।

তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা নুরুল মোত্তাকীন বলেন, ‘লেবানন ফেরতদের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও চিঠি আসেনি। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

আরও পড়ুন-

প্রতারণার শিকার ভিয়েতনাম ফেরত প্রবাসী কর্মীরা আটক

ভিয়েতনাম-কাতার ফেরত ৮৩ শ্রমিককে মুক্তি দেওয়া নিয়ে রুল জারি

প্রতারণার শিকার ভিয়েতনাম ফেরত ১০৬ জনের ভাগ্যে কী ঘটবে