শাসনতন্ত্র গ্রহণের পর গণপরিষদ ভেঙে দিতে হবে

মুজিব১(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

আসন্ন অধিবেশনে শাসনতন্ত্র গৃহীত হবার পর গণপরিষদ ভেঙে দিতে হবে এবং যত শিগগিরই সম্ভব দেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৯৭২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে এ দাবি জানানো হয়। আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

ওই বৈঠক চার ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্ত পরিষদ সদস্যদের তৃতীয় তালিকা পরীক্ষা করার জন্য দলের শৃঙ্খলা কমিটির নিকট পাঠানো হয়েছে। আর ইতোমধ্যে বহিষ্কৃতরা ইচ্ছা করলে দলীয় প্রধানের নিকট গৃহীত ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। গৃহীত প্রস্তাবের ওপর আলোকপাত করে জিল্লুর রহমান জানান যে চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতির বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য বেআইনি বলে গণ্য হবে। যত শিগগিরই সম্ভব পাটের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণের জন্য জানানো হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারি বন্ধের জন্য সরকার সম্প্রতি যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, মিল কারখানায় উৎপাদন ও আইন ভঙ্গের জন্য কঠোর শাস্তির দাবি করা হয় বৈঠক থেকে। তিনি আরও জানান দেশের জনগণের নিরাপত্তা বিধান কল্পে শান্তি-শৃঙ্খলা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সরকারকে আরও কঠোর মনোভাব দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়।

মুজিব৩৯ অক্টোবর খসড়া শাসনতন্ত্র ঘোষণা হবে

১৯৭২ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র দেশবাসীর সামনে ঘোষণা করা হবে বলে ১৯৭২ সালের ২৭ অক্টোবরে জানানো হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান দৈনিক বাংলার এক প্রতিনিধিকে এ কথা জানান। জিল্লুর রহমান বলেন একই দিনে অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি বৈঠকে শাসনতন্ত্র পেশ করা হবে। ১০ অক্টোবর দিনব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে আগামী অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। এই অধিবেশনে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রচিত খসড়া শাসনতন্ত্র পেশ করা হবে।

মুজিব৪শান্তি কমিটির সকল সদস্যকে গ্রেফতারের নির্দেশ

সরকার জেলা ও কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সকল সদস্য এবং ইউনিয়ন ও থানা শান্তি কমিটির কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করার জন্য আদেশ জারি করা হয়। কর্তৃপক্ষের সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা প্রতিষ্ঠান বিপিআই এ খবর পরিবেশন করে। শান্তি কমিটির সাধারণ সদস্য এবং রাজাকারদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হবে বলে জানানো হয়। ইতোমধ্যে দালালির অভিযোগে বেশ কিছুসংখ্যক শান্তি কমিটির সদস্য গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।

মুজিব৫
পরিত্যক্ত শিল্প কারখানা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত

পরিত্যক্ত শিল্প-কারখানা সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানা শ্রমিকদের সমবায়ে গঠিত কমিটির নিকট হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ জন্য শিগগিরই পরিত্যক্ত শিল্প কারখানার শ্রমিক সংগঠনগুলোকে তারিখ ঘোষণা করা হবে। সরকার ঘোষিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিত্যক্ত শিল্পকারখানাগুলোতে শ্রমিকরা শ্রমিক সমবায় সংগঠন করতে ব্যর্থ হলে এসব কলকারখানা প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে। প্রকাশ্যে নিলামে নিলাম গ্রহণকারী না পাওয়া গেলে আলোচনার ভিত্তিতে শিল্প-কারখানা হস্তান্তর করা হবে। ১৯৭২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

মুজিব২শ্রমনীতি ঘোষণা

বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সর্বোচ্চ পরিচালনা বোর্ডের কথা ঘোষণা করেছেন। এই পরিচালনা বোর্ডের শ্রমিকদের দুজন কর্তৃপক্ষের দুজন এবং ঋণ দান সংস্থা থেকে একজন একজন সদস্য থাকবেন। শ্রমিকদের মজুরি ও অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত বিষয়গুলো থাকবে সরকারের হাতে। এছাড়া শিল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল সমস্যার সমাধান করবে পরিচালনা বোর্ড। ১৯৭২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে শ্রম মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের প্রথম শ্রমনীতি ঘোষণা করে জহুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, সর্বোচ্চ পরিচালনা ও শিল্পের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান ও শ্রমিকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখার জন্য শিল্প কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের থেকে সমসংখ্যক প্রতিনিধি সমন্বয় করে একটি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা পরিষদ গঠন করা হবে।