খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা

1(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সকল সম্পদ প্রচেষ্টা নিয়োজিত করার আহ্বান জানান। ১৯৭২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত কৃষির ওপর এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কৃষির ওপর এই উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে ১৯৭২-৭৩ সালের জন্য দেশের কৃষি উন্নয়নে সামগ্রিক কর্মসূচি পর্যালোচনা করা হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কৃষি কর্মসূচির পূর্ণ বাস্তবায়নের উদ্দেশে সার, বীজ, কীটনাশক, ওষুধ ও কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং কৃষকের সমানভাবে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারীদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, কৃষি পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য এসব প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই দূর করতে হবে। কৃষকরা কৃষিঋণ ও অন্যান্য সহযোগিতা লাভ করতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্য অর্জনের পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের কৃষি কর্মসূচিগুলোকে সফল করে তুলতে হবে।

2
বাসসের খবরে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বলেন, আগামী শীতে উৎপাদনের কর্মসূচি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতেই হবে। তিনি বলেন, পরিকল্পনা ও তার লক্ষ্য অর্জনের মধ্য কোনও শূন্যতা থাকা চলবে না। পরিকল্পনা বা প্রকল্পের লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন করতে হবে। লক্ষ্য অর্জনে শিথিলতার কোনও অবকাশ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আগামী মাসের ফসল উৎপাদনের জন্য এবং কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃষককে সময় মতো সার বীজ কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহ করতে প্রধানমন্ত্রী কৃষি দপ্তরের অফিসারদের নির্দেশ দেন।

পাটের সর্বনিম্ন মূল্য ৫০ টাকা

সরকার পাটের নিম্নতম মূল্য ধার্য করে দেয়। সর্বনিম্ন পর্যায়ে অর্থাৎ চাষিদের কাছ থেকে প্রতিমণ ৫০ টাকার কমে পাট কেনা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়। চাষিদের স্বার্থে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। বাসসের খবরে বলা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারি মুখপাত্র সাংবাদিকদের কাছে বলেন, পাট চাষিরা যাতে পাটের সর্বনিম্ন মূল্য পান তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করার জন্য সারা দেশে পাঠ কেন্দ্রগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক ৩ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এতে আরও কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।

নতুন ভোটার তালিকার প্রস্তুতি সম্পন্ন

১ অক্টোবর থেকে ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর যারা ১৮ বছর বয়সে পদার্পণ করেছেন তারা প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার লাভ করেন। ১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর নাম প্রথম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী এ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হবে বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ হয়।

রাষ্ট্রপ্রধানের ভোটার তালিকা আদেশ ও সরকার ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী নতুনভাবে তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী কমিটি ইতোমধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের মধ্য দিয়ে গণপরিষদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শও জানায়।

3

শুরু হচ্ছে ন্যায্যমূল্যের দোকান

পহেলা অক্টোবর থেকে সারা দেশে ৪ হাজার ৭শ’ ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু হচ্ছে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী শামসুল হক ৩০ সেপ্টেম্বর এক বক্তৃতায় সরকারিভাবে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক দলের লক্ষ্য সামনে রেখে ভোজ্যপণ্য বিতরণ ব্যবস্থা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে এনে জনসাধারণকে মুনাফাখোর ও মধ্য ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলা হলেও ভবিষ্যতে আরও বেশি দোকান খোলা হবে। আপাতত ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে চাল, গম, কাপড় কাচা সাবান, সিগারেট, শিশুখাদ্য ও পরিবার পরিকল্পনার ওষুধপত্র বিতরণ করা হবে এবং তিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, দ্রব্যসামগ্রীর অপ্রতুলতার জন্য এই মুহূর্তে সবাইকে এসব দোকান থেকে পণ্য সরবরাহ করা যাবে না। এই কারণে নিম্ন আয়ের লোকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রেশন কার্ড ও মাস্টার রোলের মাধ্যমে দোকান থেকে পণ্য সরবরাহ করা হবে।