ভোটার হলেন বঙ্গবন্ধু, তালিকা চূড়ান্ত জানুয়ারিতে

1(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১ অক্টোবরের ঘটনা।)
সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭২ সালের ১ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। রাজধানী ঢাকায় এইদিন সকালে রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ভোটার তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে ভোটার তালিকা প্রণয়নের সূচনা হয়।
সকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং ধানমন্ডির বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচনি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করেছিলেন। দীর্ঘ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করার মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ ও জাতির জনক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হওয়ার পথে হাঁটতে শুরু করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ভোটার তালিকাভুক্ত করার সময় তিনি ভোটার তালিকা প্রণয়নের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। পত্রিকার খবরে বলা হয়, ভোটার তালিকায় নিজের স্বাক্ষরদানের সময় তাকে আনন্দিত দেখাচ্ছিল। ২৪ বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের পর প্রথম সুযোগেই দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়ার এক শপথদীপ্ত প্রত্যয় তার মুখমণ্ডলে পরিলক্ষিত হয়। বঙ্গবন্ধু সহাস্যবদনে ভোটার তালিকায় স্বাক্ষর করেন। এরপর এক এক করে তার পরিবারের সদস্যরা ভোটার তালিকাভুক্ত হন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিশন সরকারের সহযোগিতায় ভোটার তালিকা প্রণয়ন সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর নাম তালিকাভুক্ত করার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ পরিদর্শন করেন।

3

বঙ্গবন্ধু তুমি কঠোর হও

‘বঙ্গবন্ধু তোমাকে আজ কঠোর হতে হবে। তোমার নির্ভেজাল ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশে ত্রাসের সঞ্চার করছে। এই বিশেষ মহলের বিরুদ্ধে তোমাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে তোমাকে কঠোর হতে হবে। তুমি কঠোর হও তোমার পেছনে সারা বাংলার জাগ্রত জনতা রয়েছে’—১৯৭২ সালের ১ অক্টোবর ডিআর দুই নম্বর গেট সংলগ্ন চৌরাস্তায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজিমপুর পশ্চিমাঞ্চল শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে নূরে আলম সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।

4

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারতের শিক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ

পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনার জন্য ভারতের শিক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসেন। এই দিনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল হাসান গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় একঘণ্টা তারা আলাপ করেন। ভারতীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার। সাংবাদিকদের  নুরুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎকার খুবই আনন্দদায়ক হয়েছে। কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সাংবাদিকদের এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। নুরুল হাসান বলেন, ভারতের জনগণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মহান মুক্তিসংগ্রামের নেতা হিসেবে জানেন। ভারত ও বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী।

রাষ্ট্রপতির  সঙ্গে বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সঙ্গে ১৯৭২ সালের এইদিন সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নানা বিষয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে আলোচনা ৩০ মিনিটের অধিক স্থায়ী ছিল। এদিকে এইদিনে বঙ্গবন্ধু দেশের গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার সম্পাদকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান গণভবনে এই ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হন। বেতার ও টেলিভিশনের প্রধানরাও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

2