আটক বাঙালি কর্মচারীদের দ্রুত ভাতা দেওয়ার নির্দেশ

দৈনিক বাংলা, ৩ অক্টোবর ১৯৭২(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২ অক্টোবরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে দেওয়া আদেশ অনুযায়ী পাকিস্তানে আটক বাঙালি কর্মচারীদের পরিবার ও পোষ্যদের ভাতাদান ত্বরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন সরকারি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯৭২ সালের ২ অক্টোবর তিনি এই  নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে আবেদন জানিয়ে ভাতা যারা পাননি, তাদেরকে মূল দরখাস্তের নম্বর উল্লেখ করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে আবেদন জানাতে বলেন।

দৈনিক বাংলা, ৩ অক্টোবর ১৯৭২বাসসের খবরে বলা হয়, বহু আবেদনকারী তাদের ভাতা পাচ্ছেন না। তাদের এই অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী উপরোক্ত নির্দেশ প্রদান করেছেন। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন বিভাগে বিবেচনাধীন রয়েছে এবং ভাতার জন্য দরখাস্ত করেছেন যারা, তাদের ভাতা প্রদানের নির্দেশ দেন। এখানে উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানে আটক বাঙালি কর্মচারীদের পরিবারকে বাংলাদেশ সরকার মাসে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ভাতা প্রদান করবে বলে আদেশ প্রদান করেন। আটক কর্মচারীদের বলা হয়েছিল, পাকিস্তানে কর্মচারীরা যে যে বিভাগে নিয়োজিত রয়েছেন, তারা যেন বাংলাদেশ সরকারের সেই সেই বিভাগে আবেদন করেন। উল্লিখিত পরিবার এমনকি আটক কর্মচারীদের কাছ থেকে পাওয়া একটি পোস্টকার্ড হাজির করতে পারলেও ভাতা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

দৈনিক বাংলা, ৩ অক্টোবর ১৯৭২আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলে শাসনতন্ত্র

গণপরিষদের আগে খসড়া সংবিধান আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। সংবিধানের ওপর পার্লামেন্ট সদস্যদের ব্যাপক আলোচনার আহ্বান করা হবে ও তাদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ থাকবে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলের দুই দিনব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দলীয় প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। আরও জানা গেছে, এরপর সংবিধান অনুমোদনের জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির বৈঠকে আবারও পেশ করা হবে। আগামী ১১ অক্টোবর গণভবনে সাংগঠনিক কমিটির বৈঠক বসবে। সাংগঠনিক কমিটির বৈঠকে আলোচনা ও প্রকাশের সুযোগ পেলে সদস্যরা স্বাভাবিকভাবে সংবিধানে সংশোধনী এনে অযথা কালক্ষেপণ করবেন না।

বাংলাদেশ অবজারভার, ৩ অক্টোবর ১৯৭২দুই দেশের মন্ত্রীদের আলোচনায় মতৈক্য

বাংলাদেশ-ভারত শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে শিক্ষা সংস্কার বিষয়ক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষাবিদদের সহযোগিতার ব্যাপারে নীতিগত মতৈক্যে পৌঁছেছেন। তারা বৃত্তি প্রদান, গবেষণার সুযোগ দান, বিশেষজ্ঞ বিনিময়সহ আরও বেশ কিছু প্রশ্নই বিবেচনা করেছেন। দুই শিক্ষামন্ত্রী উচ্চশিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান অনুষদ, মহাশূন্যের শান্তিপূর্ণতা বজায়, সমাজকল্যাণ এবং ভারতের সাহায্যে শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে কবিগুরুর নামে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যৌথ কমিটি গঠনের আহ্বান জানান। বাসস ও এনার খবরে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ঢাকা থেকে চাঁদপুর নৌ-ভ্রমণকালে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী ও ভারতের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল হাসান আলোচনায় বসেন। দুই দেশের শিক্ষা দফতরের কর্মকর্তা তাদেরকে সাহায্য করেন। জুন মাসে দিল্লিতে দুই দেশের শিক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ হওয়া সিদ্ধান্তগুলোর পর্যালোচনা এই বৈঠকে করা হয়।

শাড়ি এনেছে টিসিবি কর্তারাই

টিসিবির প্রতিনিধি দল শাড়ি ও কাপড় পছন্দ করে এনেছেন বলে প্রেসনোট জারি করেছে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন। তারা বলছে, ভারত থেকে বাংলাদেশে সস্তা দরের যে শাড়ি কাপড় আনা হয়েছে, তা বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত প্রতিনিধিদল পছন্দ করেছেন। আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকারের জরুরি অনুরোধে ও বাংলাদেশে কাপড়ের বিপুল ঘাটতি পূরণ করতে ভারত সরকার জরুরি ভিত্তিতে পাঁচ কোটি টাকার সস্তা কাপড় রফতানি করতে সম্মত হয়। এই কাপড় সরেজমিন কেনার জন্য বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের প্রতিনিধি দল আগস্ট মাসে ভারতে যান। এসব শাড়ি ও কাপড় ভারতে বিভিন্ন এলাকার নিম্নবিত্ত জনগণ ব্যবহার করে থাকে এবং এগুলো শুধু অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্যই তৈরি। এসব শাড়ি ও কাপড় রফতানি মূল্যই দেওয়া হয়েছে, যা কিনা অভ্যন্তরীণ বাজার দরের চেয়ে কম।