আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদ সদস্যদের প্রতি খসড়া শাসনতন্ত্র সতর্কতার সঙ্গে পাঠ করার পরামর্শ দেন। গণপরিষদ অধিবেশনের আর দু-একদিন বাকি। বঙ্গবন্ধু সদস্যদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, আরও উৎকর্ষ সাধন এবং জনগণের স্বার্থের প্রয়োজনবোধে শাসনতন্ত্রকে সংশোধনের সুযোগ তারা পাবেন।
১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের দ্বিতীয় দিনের সভায় খসড়া শাসনতন্ত্রের পাঠ সমাপ্ত হয়। একশ ৫৩টি ধারা সম্বলিত খসড়া শাসনতন্ত্রের পাঠ শেষ হলে আইন ও পার্লামেন্টের বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন শাসনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো ব্যাখ্যা করেন। বক্তৃতার পর ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদ মুলতবি রাখা হয়। ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টায় কারিগরি মিলনায়তনে আবার সংসদীয় দলের বৈঠক বসবে।
বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সমাপ্তি অধিবেশনে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোসহ আরও তিন জন নেতাকে সর্বোচ্চ সম্মান জুলিও কুরি পদক প্রদান করে। বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটি জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ও ২৭ তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সভাপতিকে পাঠানো এক বিশেষ বাণীতে বিশ্ব শান্তি এবং বিশ্ব সংস্থার সার্বজনীনতার খাতিরে বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির সমর্থনের জন্য সব সদস্যের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পরিষদে গৃহীত অন্যান্য প্রস্তাবে বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়। অধিবেশনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদের অভিনন্দন বাণী পড়ে শোনান বাংলাদেশের প্রতিনিধি আলী আকসাদ।
সেসময় ভারতে আটক পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার শিগগিরই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিচারের জন্য তখনও সঠিক কোনও তারিখ ঠিক করা হয়নি। এনার খবরে জানা যায়, যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য বিশেষভাবে গঠিত সরকারি সংস্থা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক হাজারের বেশি সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এসব সংস্থা এখনও প্রমাণাদি সংগ্রহ এবং সংগৃহীত প্রমাণাদি পুনরায় পরীক্ষা করে দেখছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ এবং সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তাদের মধ্যে পদস্থ পাকিস্তানের সামরিক অফিসারও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরকারি মহলের মতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রমাণাদি সংগৃহীত হওয়ার পরে তাদের বিচারের জন্য একটি বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হবে এবং অপরাধীদের হস্তান্তরের জন্য ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হবে। আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে নুরেমবার্গের আদর্শে ট্রাইব্যুনালের বিচার অনুষ্ঠিত হবে। পুলিশের সাহায্যে তদন্তের জন্য গঠিত বিশেষ সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণাদি সংগ্রহ করছে বলেও প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।