বিদায় নিলেন দুর্গা

1প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। আগামী বছর আবার আসবেন এই বিশ্বাসে অশ্রুসিক্ত নয়নে দুর্গা মাকে বিদায় জানান সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমের শেষ হয় বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) দশমীর দিন দুপুর দেড়টার দিকে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর একের পর এক বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে ঘাটে প্রতিমা আসতে থাকে বিসর্জনের জন্য। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার মধ্যে দিয়ে প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নেন ভক্তরা। বিধিনিষেধের কারণে এবার শোভাযাত্রা না থাকায় ভক্তদের সংখ্যা ছিল অন্য বছরের তুলনায় কম। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই সম্পন্ন হয় বিসর্জন পর্ব।

2
রাজধানীর ওয়াইজঘাট ছাড়াও মোহাম্মদপুর বসিলা ব্রিজ , আশুলিয়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট, বালু নদীতে প্রতিমা বিসর্জন করেন ভক্তরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য এবার একটি ট্রাকে  ১০ জন যাওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। এর বাইরে অতিরিক্ত যাওয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয় মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, বিসর্জনের বিষয়টি আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছি। আমাদের আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সবাই সন্ধ্যার মধ্যে বিসর্জন সম্পন্ন করেছেন।
এদিকে মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা ঘাটে নেওয়ার পর ভক্তরা শেষবারের মতো আরতি করেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়। এ সময় ভক্তরা দুর্গা মাকে বিদায় জানান।
বিসর্জনে আসা প্রকাশ চক্রবর্তী বলেন, দুর্গা মা আমাদের আশীর্বাদ করে চলে গেছেন কৈলাসে। সামনের বছর আবার আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আসবেন। আবার মায়ের আগমনের অপেক্ষায় থাকবো আমরা।

3
বিজয়া দশমীর দিন আজ রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে বিহিত পূজা এবং পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে দশমীর পূজা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বিজয়া দশমীতে মা দুর্গা সব অশুভ শক্তি বিনাশ করে শুভ শক্তির সঞ্চার করেন। আমরা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে এই পৃথিবীতে যেন সুন্দরভাবে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বসবাস করতে পারি, তার জন্য মায়ের কাছে আমাদের আকুল আবেদন। সকালে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে মাতৃপূজা সম্পন্ন হয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে সংক্রমণ এড়াতে এ বছর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গা পূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। করোনার কারণে এবার হয়নি বিসর্জনের শোভাযাত্রা। হয়নি সিঁদুর খেলা।

4
পূজা উপলক্ষে এবার বেশ কিছু বিধিনিষেধও জারি করা হয়। মণ্ডপে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সীমিত করা ও সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় পূজামণ্ডপ। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। পূজার সময় বেশিরভাগ ভক্ত এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম