(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৯ অক্টোবরের ঘটনা।)
মুক্তিযুদ্ধকালে যেসব বাঙালি পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে আটকা পড়েছিল, তাদের ফিরিয়ে আনতে প্রায় একবছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে তার ফল পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের প্রথম দলটি ১৯৭২ সালের ৮ নভেম্বর স্বদেশ রওনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো। পাকিস্তানে আটক ২৩০ জন বাঙালির প্রথম দলটিকে সেদিন বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলে জানায় আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রস।
রমজান মাসের শেষে ৮ নভেম্বর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের ঢাকা ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, সীমান্ত পথে পাচার বন্ধে ইতোমধ্যে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্বাঞ্চল দিয়ে হাজার হাজার বাঙালি ভারতের রাজস্থানে এবং পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়। নৌ ও স্থলপথে পার হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রায় দেড়শ’ বাঙালি গ্রেফতার হয়েছেন এবং তাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে বলে এনা ও এপির খবরে প্রকাশ করা হয়।
আটকে পড়া বাঙালিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বছরজুড়েই ছিল নানা চেষ্টা। কূটনৈতিক নানা আলোচনায় এটিই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জরুরি ইস্যু হিসেবে সামনে ছিল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছে নানা আহ্বান জানানো ও ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগও নেওয়া হয়। যদিও জুলফিকার আলী ভুট্টো যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি আদায়ে এই বাঙালিদের আটকে রাখাটাকেই কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
এর আগে ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের মহাসচিব কুট ওয়ার্ল্ড হেইমের কাছে সর্বশেষ একটি ব্যক্তিগত তারবার্তা পাঠান। সেখানে পাকিস্তানে আটক বাংলাদেশিদের অবস্থা দ্রুত অবনতির জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং পাকিস্তান থেকে আটক বাঙালিদের দেশে ফিরিয়ে আনা ত্বরান্বিত করার জন্য মহাসচিবের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তারবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসচিবকে পাকিস্তানিদের অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচানোর জন্য এবং সেখানে তাদের অবস্থা সরেজমিন তদন্ত করে দেখার জন্য পাকিস্তানে তাদের প্রতিনিধি পাঠানোর আবেদন জানান। পাকিস্তানে আটক সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মচারী এবং বহু সাধারণ বাঙালির অবস্থার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিগত চিঠিতে বলেন, ‘সেখানে আটক বাঙালিদের যে কেবল তাদের জীবিকা অর্জন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তা-ই নয়, বরং তাদের স্বদেশে ফিরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
ভারতে আটক পাকিস্তানি বন্ধুদের জন্য পাকিস্তান সরকার ছোট ছোট উপহারের প্যাকেট পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। পাকিস্তান বেতারে এ সিদ্ধান্তের খবর ঘোষণা করা হয়। ঘোষণায় বলা হয় যে, ভারতে পাঠানো উপহার সামগ্রী প্রাপকের পূর্ণ বিবরণ ও ক্যাম্পের ঠিকানাসহ আন্তর্জাতিক রেডক্রস অথবা তথ্য বিভাগে পাঠানো হবে। উপহার কেবল একজন যুদ্ধবন্দি, অথবা একজন আটক অসামরিক বন্ধুর নামে পাঠানো যাবে এবং প্যাকেটে উপহারের তালিকা করে দিতে হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন অবান্তর
শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় ব্যক্তিগত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করার প্রশ্নই ওঠে না।’ স্থানীয় কারিগরি মিলনায়তনে আয়োজিত চটকল শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি সম্মেলনে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘পুরনো মালিকদের হাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানা তুলে দেওয়া হবে—এটি ভিত্তিহীন ও গুজব ছাড়া আর কিছু নয়। ’
তিনি বলেন, ‘মূলত পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। সেহেতু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কর্মসূচির নিশ্চয়তা বিধানে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলের যে অসন্তোষ রয়েছে, এটা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে পরস্পর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করে নিতে হবে। সমাজতন্ত্রের নামে একদল শিল্পাঞ্চলে আঞ্চলিক বিভেদ সৃষ্টি করে উৎপাদন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজকেই সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে এই বিদ্বেষপ্রসূত ভাব দূর করতে হবে।’
সংবিধানে ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা চায় ন্যাপ
পল্টনের জনসভায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করে ক্ষমতাসীন দল যদি সংকীর্ণ মনোভাব নিয়ে তাড়াহুড়া করে শাসনতন্ত্র পাস করিয়ে নেয়, তাহলে সংগ্রামী জনগণ চুপ থাকবে না।’ সংবিধানে জনগণের ভাত, কাপড়, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চাকরির নিশ্চয়তা দিতে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।