পাকিস্তানে যেতে ইচ্ছুক সবাইকে ফেরত পাঠানো হবে বলে পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র ঘোষণা দিয়েছেন। ১৯৭২ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকায় তিনি বলেন, পাকিস্তানি বেসামরিক লোকদের পরিবারবর্গের সে দেশে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে যুদ্ধবন্দিদের প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি আরও জটিল করে তুলেছে। পাকিস্তান থেকে পাওয়া সর্বশেষ রিপোর্টের ওপর মন্তব্য প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, অন্তরীণ পাকিস্তানি বেসামরিক লোকদের পরিবারবর্গ যারা ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনীর যৌথ কমান্ডের আশ্রয় প্রার্থনা করেছে এবং যুদ্ধবন্দিদের পরিবারবর্গ যারা যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, বাংলাদেশ ও ভারত মানবিক কারণে মিলিতভাবে তাদের সবাইকেই স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আরও বলেন যে, বাংলাদেশ সরকার তার বাস্তবমুখী মনোভাব প্রমাণের জন্য, বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত যারা পাকিস্তান চলে যাওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করবে, তাদের সবাকেই ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত আছে। বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালিদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেওয়ার মনোভাব প্রদর্শন করবে পাকিস্তান বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। বাসস এ খবর দেয়।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানে আটক সব ভারতীয় যুদ্ধবন্দিকে বিনাশর্তে মুক্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালের এই দিনে তিনি নাটকীয়ভাবে এই ঘোষণা দেন। তিনি এমন একটি সময়ে এ ধরনের ঘোষণা দিলেন, যখন কিনা পাকিস্তানে আটক বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দেওয়া ও বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের কাছে আটক পাকিস্তানি বন্দিদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলাপ হচ্ছিল। ভারতীয় যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হবে—এমন ঘোষণার নাটকীয়তার পর ভারত পশ্চিম রণাঙ্গনে আটক ৫৪০ জন যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব পুনরুল্লেখ করে। সিমলা বৈঠকে ভারত প্রথম এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল।
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো একটি হেলিকপ্টারে করে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল টিক্কা খান, পাঞ্জাবের গভর্নর গোলাম মোস্তফা এবং সেক্রেটারি আজিজ আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে লায়ালপুর বন্দিশিবিরে যান। এই কারাগারেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক রাখা হয়েছিল।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের কতিপয় স্বল্পমেয়াদি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি উন্নয়ন স্কিমের কাজ শুরু করবে। ১৯৭২ সালের এই দিনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ দফতরের মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ ও বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কারগিলের মধ্যে এসব স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর এই ঘোষণা করা হয়। এরপর বিকালে (২৭ নভেম্বর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার কারগিলের মধ্যে ৪৫ মিনিট আলোচনা হয়। আলোচনার পর বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের জানান যে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য সমস্যা ও ভবিষ্যৎ সাহায্য কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বন্যা নিয়ন্ত্রণ সমস্যার বিষয়ে স্বল্পমেয়াদের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভের চেষ্টায় বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দেয় ব্রিটেন এবং উপমহাদেশের সব অমীমাংসিত সমস্যা দ্রুত নিষ্পত্তি ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ সাত দিনব্যাপী ব্রিটেনে সফর শেষে সেখানে প্রকাশিত এক যুক্ত বিবৃতিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক হিউম বলেন, ‘ব্রিটেনের সাধারণ বাজারে যোগদানের ফলে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট সমস্যাবলি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে। এদিকে প্যারিস থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, লন্ডনে ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে সামাদ আজাদ দুই দিনের সরকারি সফরে প্যারিসে পৌঁছান। সেখানে তার ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরিস স্যুমনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা।