করোনায় মৃতদের ৫৩ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব

করোনা টেস্ট (ছবি: ফোকাস বাংলা)করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মারা গেছেন ২০ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ছয় হাজার ৫৪৪ জন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে তিন হাজার ৪৬৯ জনের বয়সই ৬০ বছরের বেশি। অর্থাৎ করোনায় দেশে মারা যাওয়া মোট মৃত্যুর শতকরা ৫৩ দশমিক ১ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব।

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ওই ব্যক্তির বয়স ছিল ৭০ বছরের বেশি। তিনি বিদেশফেরত এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন। সংক্রমণের পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বন্ধ হয়ে যাওয়া বুলেটিনে এবং এর আগে হওয়া করোনা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে ৬০ বছর বয়সী এবং যারা অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়। তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার কথাও পরিবারের অন্য সদস্যদের বলা হয়।

গত ২৭ আগস্ট কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভায় করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করা হয়। কমিটি জানায়, যেহেতু প্রথমেই হয়তো দেশের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার জন্য ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে, তাই উচ্চ ‘ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী’ বাছাই করে পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন প্রদান করা যেতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২০ জনের মধ্যে বয়স বিশ্লেষণে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২০ জনের মধ্যে ১০ জনই ষাটোর্ধ্ব। আর মোট মারা যাওয়া ছয় হাজার ৫৪৪ জনের মধ্যে তিন হাজার ৪৬৯ জন এ বয়সের, যা শতকরা হিসেবে ৫৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে রয়েছেন এক হাজার ৭১০ জন, অর্থাৎ ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭৯৪ জন, যা ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩৪২ জন, যা পাঁচ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১৪৬ জন, যা দুই দশমিক ২৩ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৫২ জন, যা শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে রয়েছে ৩১ জন, যা শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। 

অপরদিকে, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন তিন হাজার ৪৮৭ জন, শতকরা হিসেবে যা ৫৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ২৫৩ জন,  যা ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ৪০১ জন, যা ছয় দশমিক ১৩ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ৪৯২ জন, যা সাত দশমিক ৫২ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ২১৮ জন, যা তিন দশমিক ৩৩ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ২৬৪ জন, যা চার দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, রংপুর বিভাগে ২৯৭ জন, যা চার দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ১৩২ জন, যা দুই দশমিক শূন্য দুই শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা এর আগে জানিয়েছেন, বেশি বয়সে অন্যান্য রোগ থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকেন বেশি। ক্যানসার ও হৃদরোগসহ যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন, তাদের জন্য করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এ জন্য ঘরের বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সবসময় তিনি আলাদা নজর দেওয়ার কথা বলেন।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বয়স্করা যেকোনও রোগের বেলাতেই সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। তারা আগে থেকেই নানান জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন। তারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভোগেন। যে কারণে তারা স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল থাকেন এবং সহজেই কাবু হয়ে যান।’