জনতা বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখার জন্য এত ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল যে অনেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে জাহাজের কাছে পৌঁছানোরও চেষ্টা করেছিল। বরিশাল থেকে ঝালকাঠিতে এসে পৌঁছালে আড়িয়ালখাঁ নদীর তীরে হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য ভিড় করে। অগ্রসরমান ইনভেস্টিগেটর জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে অগ্রসর হতে থাকে তারা। বাসস এ খবর প্রকাশ করে।
খবরে আরও বলা হয়, উপকূল অঞ্চল ও সুন্দরবন এলাকায় চার দিনব্যাপী সরকারি সফর। এরপর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় ফিরবেন।
উল্লেখ করা হয়, ঝালকাঠিতে যে জায়গায় দখলদার পাকিস্তান বাহিনী মানুষকে হত্যা করে একটি খালের মধ্যে নিক্ষেপ করেছিল বঙ্গবন্ধু সেখানে যান এবং শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য ফাতেহা পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাখার জন্য শহীদদের কঙ্কালগুলো অবিলম্বে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ঝালকাঠিতে জনগণ তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে শত শত লোক জাহাজ পর্যন্ত এগিয়ে যায়। আবার ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকায় ফেরার জন্য প্রধানমন্ত্রী রওনা দেন। বঙ্গবন্ধু ঝালকাঠি পৌঁছালে স্থানীয় এমসিএ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা তাকে সংবর্ধনা জানান।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী দৃঢ়তার সঙ্গে আবার একথা ঘোষণা করেন যে উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, এই উপমহাদেশকে চির শান্তির নীড় রূপে গড়ে তোলার জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করবো। রাষ্ট্রপ্রধান আবু সাঈদ চৌধুরী কলকাতায় তার সম্মানে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন। কলকাতায় রবীন্দ্রসদনে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় তাকে প্রদত্ত মানপত্রের জবাবে রাষ্ট্রপ্রধান আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এই আশা করে যে ভারত-বাংলাদেশ তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও নিবিড় করে তোলার জন্য যে কেবল পারস্পরিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে তা নয়, বরং এ দুটি দেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ভারত বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন প্রেরণা পাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি এবং এই কারণে এই উপমহাদেশ তথা সারা বিশ্বের শান্তির পথে পরিচালিত হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে পাকিস্তানও বাংলাদেশের স্থায়ী শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। পাকিস্তান উপমহাদেশের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে এবং অন্যায়ভাবে পাঁচ লাখ বাঙালিকে আটকে রেখে উপমহাদেশে উত্তেজনা জিইয়ে রাখছে।
ভুট্টোর নয়া অর্ডিন্যান্স জারি
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো তার দক্ষিণপন্থী বিরুদ্ধবাদীদের প্রচারণা দমনের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেন। জামায়াতে ইসলামীসহ প্রমুখ দক্ষিণপন্থী বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনকে হাঙ্গামা সৃষ্টির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। ভুট্টো পাকিস্তান ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধন করে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। দুইদিন আগে একটি জনসভায় গোলযোগের পরে এই অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোস্তফা সরওয়ার ধামরাইতে অনুষ্ঠিত জনসভায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সোনার বাংলা পুনর্গঠিত হবে। সরওয়ার আরও বলেন, জাতি নিজের মনোভাব ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশকে মুক্ত করেছে। এই দুই জিনিসের ওপর নির্ভর করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপায়িত করা যাবে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করার জন্য জনগণের নিকট আবেদন জানান তিনি। যেসব রাজনৈতিক দল স্বাধীনতা নসাৎ করতে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে গঠনতান্ত্রিক পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করার আহ্বানও জানান।